Pay Fixation । বেতন নির্ধারণ

নতুন বেতন কাঠামোতে ফিক্সেশনের নিয়মে বড় পরিবর্তন ২০২৫ । পুরাতন ইনক্রিমেন্টের সম্পূর্ণ সুবিধা বহাল

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোতে বেতন নির্ধারণ বা ফিক্সেশনের নিয়মে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। এই নতুন পদ্ধতি নিশ্চিত করবে যে, পুরাতন স্কেলে অর্জিত ইনক্রিমেন্টের সম্পূর্ণ আর্থিক সুবিধা নতুন স্কেলেও অক্ষুণ্ণ থাকবে, যা কর্মীদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে।

ফিক্সেশনের নতুন পদ্ধতি: কীভাবে যোগ হবে সুবিধা?

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, পুরাতন স্কেলে ইনক্রিমেন্টের মাধ্যমে অর্জিত অতিরিক্ত অর্থ সরাসরি নতুন স্কেলের প্রারম্ভিক বেতনের (Starting Salary) সাথে যোগ করা হবে।

পদ্ধতিটি নিম্নরূপ:

১. ইনক্রিমেন্টজনিত পার্থক্য নির্ণয়: প্রথমে পুরাতন স্কেলে ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর প্রাপ্ত মূল বেতন থেকে স্কেলটির প্রারম্ভিক বেতন বাদ দিয়ে পার্থক্যটি বের করতে হবে। এই পার্থক্যটিই হলো কর্মচারীর অর্জিত ইনক্রিমেন্ট সুবিধা। * উদাহরণ: যদি কোনো কর্মচারী টাকার স্কেলে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে টাকা মূল বেতন পান, তবে ইনক্রিমেন্ট সুবিধা হবে:

২. নতুন স্কেলের প্রারম্ভিক বেতনের সাথে যোগ: এই অর্জিত সুবিধাটি নতুন পে স্কেলের নির্ধারিত প্রারম্ভিক বেতনের সাথে যোগ করা হবে। * উদাহরণ: যদি ১০ম গ্রেডের নতুন পে স্কেলের স্টার্টিং বেতন টাকা হয়, তবে গণনাকৃত নতুন বেতন হবে:

৩. ‘নিকটতম উচ্চতর ধাপ’ নীতি প্রয়োগ: এরপর দেখা হবে যে টাকার স্কেলে টাকার কাছাকাছি কোনো ধাপ আছে কি না। * যদি টাকা সরাসরি স্কেলে না থাকে, তবে নিকটতম উচ্চতর ধাপে বেতন নির্ধারণ করা হবে। * উদাহরণস্বরূপ, যদি টাকার কাছাকাছি ধাপটি টাকা হয়, তবে কর্মচারীর চূড়ান্ত মূল বেতন টাকা নির্ধারণ করা হবে।

কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই নতুন সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মীদের জন্য একটি বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ। পূর্বে ফিক্সেশনের জটিল নিয়মের কারণে অনেক সময় কর্মচারীরা তাদের পুরাতন ইনক্রিমেন্টের সুবিধা সম্পূর্ণভাবে পেতেন না বলে অভিযোগ ছিল। কিন্তু এই নতুন সরলীকৃত পদ্ধতি কার্যকর হলে অর্জিত ইনক্রিমেন্টের আর্থিক মূল্য সরাসরি নতুন বেতনের সাথে যুক্ত হওয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

অর্থ বিভাগ আশা করছে, এই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুততার সাথে নতুন বেতন কাঠামোয় বেতন নির্ধারণ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে এবং বেতন-ভাতা প্রদানে সৃষ্ট জটিলতা অনেকাংশে কমে আসবে।

পে স্কেল জারির আগেই পে ফিক্সেশন শুরু হয়ে গেল?

পে স্কেল জারি ও ফিক্সেশনের নিয়ম

১. সাধারণ নিয়ম

সাধারণ নিয়ম হলো:

  • প্রথমত, সরকার নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের (পে স্কেল) চূড়ান্ত গেজেট বা আদেশ জারি করে।
  • দ্বিতীয়ত, এই আদেশ জারির পর সফটওয়্যারভিত্তিক পে ফিক্সেশন (Pay Fixation) বা অনলাইনে বেতন নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কারণ, পে ফিক্সেশন করার জন্য নতুন স্কেলের প্রতিটি ধাপ (Step), প্রারম্ভিক বেতন এবং বেতন বৃদ্ধির হার সংক্রান্ত আইনি তথ্য থাকা অপরিহার্য।

পে ফিক্সেশন হলো নতুন স্কেল অনুযায়ী কর্মচারীর পুরোনো বেতনকে নতুন স্কেলের সমতুল্য ধাপে নিয়ে যাওয়া। স্কেল বা ধাপগুলো চূড়ান্ত না হলে এই ফিক্সেশন করা সম্ভব নয়।


২. কেন মনে হতে পারে ‘আগে শুরু হয়েছে’?

পে স্কেল জারির আগেই ফিক্সেশন শুরু হয়েছে বলে মনে হওয়ার কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

  • খসড়া বা নীতিগত সিদ্ধান্ত: অনেক সময় পে-কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলে বা সরকার নীতিগতভাবে নতুন স্কেল অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিলে, হিসাবরক্ষণ অফিসগুলো (যেমন iBAS++ সিস্টেমের সাথে যুক্ত) প্রাথমিক প্রস্তুতি বা ডাটাসেট তৈরি শুরু করে।
  • বকেয়া বেতন নির্ধারণ: নতুন স্কেল সাধারণত পূর্ববর্তী কোনো একটি তারিখ (যেমন: ১ জুলাই) থেকে কার্যকর হয়। যখন গেজেট জারি হয়, তখন কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য দ্রুত অনলাইনে ফিক্সেশন প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গেজেট প্রকাশের আগেই অভ্যন্তরীণভাবে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেন।
  • উচ্চতর গ্রেড/ইনক্রিমেন্টের ফিক্সেশন: যদি আপনার পে ফিক্সেশনের বিষয়টি নতুন পে স্কেলের কারণে না হয়ে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, উচ্চতর গ্রেড (Higher Grade) বা পদোন্নতির কারণে হয়ে থাকে (যা পুরাতন স্কেলের নিয়মে ছিল), তবে এটি পে স্কেল জারির সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়।

যদি কোনো সম্পূর্ণ নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের ফিক্সেশনের কথা বলা হয়, তবে গেজেট জারি না হলে সেই ফিক্সেশন প্রক্রিয়া আইনগতভাবে চূড়ান্ত হতে পারে না। যদি কোনো প্রক্রিয়া চলতে দেখা যায়, তবে তা সাধারণত প্রস্তুতিমূলক কাজ বা নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে তৈরি খসড়া অনুযায়ী হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *