সর্বশেষ প্রকাশিত

বেতনে বৈষম্য দূর করার জোর দাবি ২০২৫ । প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারাও গরীব, আমাদের ১২ হাজার বেসিকই যথেষ্ট?

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে দেশজুড়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, ঠিক তখনই বেতনের বৈষম্য দূর করে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের বেসিক বেতন আড়াই লাখ টাকা করার এবং নিম্ন স্তরের কর্মচারীদের বেসিক ১২ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে এক অভূতপূর্ব আওয়াজ উঠেছে। এই দাবিটি মূলত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের “দরিদ্রতা”র প্রতি এক ধরনের তির্যক আলোকপাত এবং একইসঙ্গে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের সীমিত বেসিকে সন্তুষ্ট থাকার এক ব্যতিক্রমী চিত্র তুলে ধরেছে।

প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ‘আড়াই লাখের’ দাবি

দাবিদারদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১ম শ্রেণির কর্মকর্তারা লাখ টাকা বেসিকেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এতোটাই ‘নাজুক’ যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেসিকেও তাদের চলবে না। এই ‘গরীব’ প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে তাদের বেসিক বেতন বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে। এই দাবির পক্ষে সাধারণ নাগরিকদেরও মাঠে নামার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নিম্ন স্তরের কর্মীদের ‘স্বল্পতেই সন্তুষ্টি’

অন্যদিকে, একই দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য একটি ভিন্ন বার্তা। তারা বলছেন, তাদের জন্য শুধুমাত্র ১২ হাজার টাকা বেসিক হলেই যথেষ্ট। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের তুলনায় নিজেদের দাবিকে নগণ্য রেখে এই কর্মচারীরা যেনো বেতন কাঠামোর বিদ্যমান ব্যাপক বৈষম্যকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে তুলে ধরছেন। এই অসঙ্গতিপূর্ণ দাবিটি কার্যত উচ্চপদস্থ ও নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মীদের বেতন-ভাতার মধ্যে থাকা বিশাল ফারাককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

বেতনের অনুপাত নিয়ে বিতর্ক

জাতীয় বেতন কমিশন বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১ এর মধ্যে রাখার বিষয়ে পর্যালোচনা করছে। তবে, উল্লিখিত এই দাবির প্রতিফলন ঘটলে তা বেতনের অনুপাতকে অপ্রত্যাশিত মাত্রায় নিয়ে যাবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এবং অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে গুরুতর অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।

সাধারণ কর্মচারী ইউনিয়নগুলো দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যহীন বেতন স্কেল এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে। তবে এই নতুন ও অপ্রচলিত দাবিটি নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের উপর একটি নতুন চাপ সৃষ্টি করল।

বিশ্লেষকদের মতে, উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন অত্যধিক বাড়ানোর এমন দাবি এবং নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের ন্যূনতম চাহিদার মধ্যে বৈসাদৃশ্য স্পষ্টতই সরকারি বেতন কাঠামোতে বিদ্যমান গুরুতর বৈষম্যের প্রতি সমাজের হতাশা এবং ক্ষোভকে প্রকাশ করছে। সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।

১:৪ অনুপাতের বেতন কাঠামো এবং সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা বেতনের দাবি

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) নির্ধারণের প্রক্রিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করার এবং বেতনের অনুপাত ১:৪ এ নামিয়ে আনার দাবি উঠেছে। এই দাবিটি বিশেষ করে কর্মচারীদের নিম্ন গ্রেডগুলোর মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে, কারণ এর লক্ষ্য হলো বেতন বৈষম্য কমানো।

প্রধান দাবিসমূহ:

দাবিদারদের পক্ষ থেকে যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে, তার মূল বিষয়গুলো হলো:

১. বেতনের অনুপাত কমানো (১:৪): বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১। এই অনুপাতকে ১:৪-এ নামিয়ে আনার দাবি করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন যদি টাকা হয়, তবে সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন হবে টাকা। এই পরিবর্তন কার্যকর হলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বিশাল বেতন বৈষম্য অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

২. সর্বনিম্ন বেসিক ৩৫,০০০ টাকা: মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে, সর্বনিম্ন (২০তম গ্রেড) কর্মচারীর মূল বেতন (বেসিক) ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণের দাবি করা হয়েছে।

৩. গ্রেড সংখ্যা হ্রাস (১২টি গ্রেড): বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ২০টি গ্রেড রয়েছে। এই সংখ্যা কমিয়ে ১২টি গ্রেড করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্রেড সংখ্যা কমালে পদোন্নতির সুযোগ বাড়বে এবং পদসোপানের জটিলতা কমবে বলে মনে করছেন দাবিদাররা।

দাবির প্রভাব:

যদি ১:৪ অনুপাত এবং সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা ধরে নতুন বেতন কাঠামো তৈরি হয়, তাহলে সর্বোচ্চ গ্রেডের (গ্রেড-১) মূল বেতন হবে:

এটি বর্তমান সর্বোচ্চ বেতনের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম হবে, যা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।

পে-কমিশনের বর্তমান অবস্থান:

জাতীয় বেতন কমিশন বর্তমানে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিচ্ছে এবং তারা মূলত সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখার বিষয়েই বেশি আগ্রহী।

  • কমিশন গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১২ থেকে ১৫টি করার প্রাথমিক আলোচনা করছে।
  • তবে, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা এবং ১:৪ অনুপাতের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী দাবিগুলো নিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

নতুন পে-স্কেল কার্যকর হলে সব শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কমিশন আশা করছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে জমা দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *