ওভারটাইমের সুযোগে গার্মেন্টস শ্রমিকের আয় অনেক সরকারি কর্মচারীর চেয়ে বেশি!
দেশের তৈরি পোশাক (গার্মেন্টস) শিল্পের একজন জুনিয়র প্যাকারম্যানের ওভারটাইম (অধিকাল) ভাতার মাধ্যমে মাসিক আয় এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যা অনেক সময় নিয়মিত বেতন পাওয়া একজন সরকারি কর্মচারীর মোট সুযোগ-সুবিধার চেয়েও বেশি হয়ে যায়। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য অধিকাল ভাতার সুস্পষ্ট আইনি বিধান থাকার কারণেই এই বৈসাদৃশ্য দেখা যায়।
তুলনার কেন্দ্রবিন্দু: ওভারটাইম ভাতা
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুসারে, একজন গার্মেন্টস শ্রমিককে দৈনিক আট ঘণ্টা ও সাপ্তাহিক ৪৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করালে প্রতি ঘণ্টার জন্য সাধারণ মজুরির দ্বিগুণ হারে ওভারটাইম ভাতা দিতে হয়। এই ব্যবস্থা শ্রমিকদেরকে কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে তাদের মাসিক আয় বাড়ানোর একটি বড় সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে জুনিয়র প্যাকারম্যান বা অপারেটরের মতো পদগুলোতে কাজের চাপ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য নিয়মিত ওভারটাইমের সুযোগ থাকে, যা তাদের মূল বেতনকে প্রায় দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক গেজেট অনুযায়ী একজন গ্রেড-৭ বা গ্রেড-৬ এর জুনিয়র শ্রমিকের মূল মজুরি কম হলেও ওভারটাইমের কারণে তাদের মাসিক মোট বেতন সহজেই ১৭ থেকে ২১ হাজার টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
সরকারি চাকরিতে সুযোগ সীমিত
তুলনামূলকভাবে, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বেতন কাঠামো নির্ধারিত এবং সেখানে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ সীমিত। সরকার তার কর্মচারীদের জন্য উৎসব ভাতা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করলেও, নিয়মিত ওভারটাইম ভাতার কোনো সাধারণ বিধান নেই। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমন নির্দিষ্ট দপ্তরের ড্রাইভার বা মাঠপর্যায়ের কর্মচারী) অধিকাল ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও, তা গার্মেন্টস খাতের মতো এত ব্যাপক ও নিয়মিত নয়। ফলস্বরূপ, মধ্যম বা নিম্ন গ্রেডের একজন সরকারি কর্মচারী তার নিয়মিত মাসিক বেতন ও ভাতার বাইরে অতিরিক্ত আয়ের জন্য ওভারটাইমের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকেন।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
শ্রম ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “গার্মেন্টস শ্রমিকদের এই ওভারটাইম সুবিধা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক। তবে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত ওভারটাইমের সুযোগ না থাকাটা একটি কাঠামোগত দুর্বলতা। উভয় খাতের কর্মজীবীদের কাজের প্রকৃতি ও দায়িত্বের ভিন্নতা থাকলেও, কাজের অতিরিক্ত সময়ের জন্য সরকারি কর্মচারীদেরও ন্যায্য আর্থিক মূল্যায়ন থাকা প্রয়োজন।”
সামগ্রিকভাবে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য থাকা অধিকাল ভাতার আইনি সুরক্ষা এবং নিয়মিত কাজের সুযোগ তাদের মাসিক আয়ে যে গতি আনে, তা সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি অনুকরণীয় সুযোগের অভাবকেই তুলে ধরে।

দেশের তৈরি পোশাক (গার্মেন্টস) শিল্পের একজন জুনিয়র প্যাকারম্যান তার ওভারটাইম (অধিকাল) ভাতার সুযোগ ব্যবহার করে এমন একটি মাসিক আয়ের অবস্থানে পৌঁছাতে পারেন, যা অনেক নিম্ন গ্রেডের সরকারি কর্মচারীর মোট বেতন-ভাতার সুযোগকে ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী অধিকাল ভাতার সুস্পষ্ট আইনি বিধান থাকার ফলেই এই বৈসাদৃশ্য তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
গার্মেন্টস খাতে আয়ের চিত্র: ওভারটাইমই মূল চালিকাশক্তি
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত গার্মেন্টস শিল্পের নতুন নিম্নতম মজুরি গেজেট অনুযায়ী, একজন গ্রেড-৪ (জুনিয়র প্যাকারম্যান এই গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত) শ্রমিকের মোট মাসিক মজুরি হলো ১৪,১২৫ টাকা (মূল মজুরি: ৭,৪২১ টাকা, বাড়িভাড়া: ৩,৭১১ টাকা, চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্য ভাতা)।
- অধিকাল (ওভারটাইম) সুবিধা: বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, দৈনিক ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত কাজের জন্য শ্রমিকরা সাধারণ মজুরির দ্বিগুণ হারে অধিকাল ভাতা পান। উৎপাদনের চাপ সামলাতে গার্মেন্টস শিল্পে নিয়মিত অতিরিক্ত কাজের সুযোগ থাকায়, একজন জুনিয়র প্যাকারম্যান সহজেই মাসে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০ ঘণ্টা বা তারও বেশি ওভারটাইম করতে পারেন।
- মাসিক আয় বৃদ্ধি: যদি একজন জুনিয়র প্যাকারম্যান মাসে গড়ে ৮০ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করেন, তবে তার মোট মাসিক আয় সহজেই ১৭,০০০ থেকে ২২,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। এই ওভারটাইমই তার বেতনের মোট অঙ্ককে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যায়।
সরকারি চাকরিতে ওভারটাইম সুযোগের অভাব
অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো (জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) নির্ধারিত এবং সেখানে অতিরিক্ত কাজের জন্য নিয়মিত ওভারটাইম ভাতার কোনো সাধারণ এবং সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই।
- বেতন কাঠামো: ২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী ২০তম গ্রেডের কর্মচারীর মূল বেতন হলো ৮,২৫০ টাকা এবং মোট বেতন (বাড়ী ভাড়া, চিকিৎসা, ইত্যাদি সহ) প্রায় ১৬,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে (ভিন্ন শহরের জন্য ভিন্ন হতে পারে)।
- সুযোগের পার্থক্য: সরকারি কর্মচারীরা উৎসব ভাতা বা শ্রান্তি বিনোদন ভাতার মতো কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পেলেও, গার্মেন্টস শ্রমিকের মতো নিয়মিত ও ব্যাপক আকারে ওভারটাইম করার এবং তার দ্বিগুণ হারে ভাতা পাওয়ার সুযোগ তাদের জন্য নেই। ফলে, একটি নির্দিষ্ট বেতনের বাইরে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তাদের জন্য প্রায় বন্ধ।
বিশ্লেষণ: এই তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে চাকরির নিরাপত্তা ও অন্যান্য সামাজিক মর্যাদা থাকলেও, ‘অধিকাল ভাতা’র আইনি সুবিধার কারণে গার্মেন্টস খাতের জুনিয়র প্যাকারম্যানের মতো শ্রমিকের মাসিক নগদ আয় অনেক ক্ষেত্রে নিম্ন গ্রেডের একজন সরকারি কর্মচারীর মোট সুযোগ-সুবিধাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে। এই বৈসাদৃশ্য দেশের শ্রমবাজারে কর্মঘণ্টার সঠিক আর্থিক মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরছে।

