এক দফা এক দাবি ২০২৫ । প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ১২-গ্রেডভিত্তিক পে-স্কেলের দাবিতে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ?
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ ঐতিহাসিক এক মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সর্বোচ্চ ১২টি গ্রেড, সর্বনিম্ন $35,000$ টাকা বেতন এবং ১:৪ আনুপাতিক হারে পে-স্কেল বাস্তবায়নের জোরালো দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কর্মচারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গতকাল রাতেই রাজধানীতে এসে পৌঁছেছেন, যা তাদের দাবির প্রতি গভীর অঙ্গীকারের প্রমাণ বহন করে।
মূল দাবি: বৈষম্যমুক্ত নতুন পে-স্কেল
সমাবেশের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘এক দফা এক দাবি’: বৈষম্যমুক্ত পে-স্কেল দিতে হবে। কর্মচারীরা সুনির্দিষ্টভাবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন:
-
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেড: পে-স্কেলকে সর্বোচ্চ ১২টি গ্রেড-এ সীমাবদ্ধ করতে হবে।
-
বেতনের কাঠামো: সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন৩৫,০০০ (পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
-
আনুপাতিক হার: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের অনুপাত ১:৪ হতে হবে, যা বেতন-কাঠামোতে বিদ্যমান বৈষম্য হ্রাস করবে।
সময়সীমা নির্ধারণ
দাবি বাস্তবায়নে কর্মচারীরা একটি কঠোর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। তাদের মূল বক্তব্য হলো:
-
রিপোর্ট ও গেজেট: আগামী ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখের পূর্বে পে-স্কেলের রিপোর্ট জমা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
-
ঘোষণা চাই: ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই এই নতুন পে-স্কেলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হবে।
কর্মচারীদের দৃঢ় অবস্থান
সমাবেশে উপস্থিত কর্মচারীদের কন্ঠে একই সুর, “পে স্কেল দিতে হবে, দিয়ে দেও।” তাঁরা মনে করেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনধারণের মান বজায় রাখতে এই বেতন বৃদ্ধি তাঁদের ন্যায্য দাবী। বক্তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে এই আন্দোলন সফল হবে। সমাবেশে ধ্বনিত হয়েছে আশাবাদ – ইনশাআল্লাহ, বিজয় সুনিশ্চিত! প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত এই বিশাল সংখ্যক কর্মচারীর এই যৌক্তিক দাবি সরকার দ্রুত বিবেচনা করে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।

মহাসমাবেশ কি পরবর্তী সরকার পে স্কেল বাস্তবায়ন করবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করতে পারবেন?
এটি একটি অত্যন্ত রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রশ্ন। মহাসমাবেশ সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার যদি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পে-স্কেল বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করে, তবে পূর্বের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ক্ষমতা তাদের থাকে। তবে, এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন:
১. রাজনৈতিক এবং জনমতের প্রভাব
মহাসমাবেশ হলো কর্মচারীদের শক্তি ও ঐক্যের প্রতীক। এই ধরনের বৃহৎ সমাবেশ সাধারণত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং দাবিটিকে একটি জরুরী রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করে।
-
জনমত: কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের একটি বিশাল অংশ। তাদের এই ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া বা না নেওয়া পরবর্তী সরকারের জনপ্রিয়তার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কোনো নির্বাচিত সরকারই বিপুল সংখ্যক কর্মচারীর দাবি অগ্রাহ্য করে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করতে চাইবে না।
-
আন্দোলনের ধারাবাহিকতা: যদি কর্মচারীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন, তবে পরবর্তী সরকার চাপের মুখে থাকতে বাধ্য হবে। মহাসমাবেশ পরবর্তী আন্দোলনের ভিত তৈরি করে দেয়।
২. সরকারের বর্তমান অবস্থান এবং পে-স্কেলের আইনি প্রক্রিয়া
পে-স্কেল একটি গেজেট বা সরকারী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়। যদি বর্তমান সরকার আপনার দাবিকৃত সময়সীমার মধ্যে (১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে) গেজেট প্রকাশ করে দেয়, তবে:
-
আইনগত স্বীকৃতি: এটি একটি আইনগত ভিত্তি পেয়ে যাবে এবং কর্মচারীরা সেই স্কেলে বেতন পেতে শুরু করবেন।
-
বাতিল কঠিন: একবার গেজেট কার্যকর হয়ে গেলে, পরবর্তী সরকারের জন্য সেটি সম্পূর্ণ বাতিল করা বা বড় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এর জন্য ব্যাপক আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয় এবং কর্মচারী অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করতে পারে।
⚠️ সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে: যদিও পে কমিশন রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, অর্থ উপদেষ্টা এক বিবৃতিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে নতুন পে-স্কেলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। কর্মচারীদের এই মহাসমাবেশ সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্যই কঠোর চাপ সৃষ্টি করছে।
৩. অর্থনৈতিক বাস্তবতা
পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য বিশাল অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। পরবর্তী সরকার পে-স্কেল বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে যদি তারা মনে করে যে:
-
অর্থনৈতিক চাপ: দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা এত বড় আর্থিক বোঝা বহন করতে সক্ষম নয়।
-
অন্যান্য অগ্রাধিকার: তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বা অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচিতে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয় রয়েছে।
সারসংক্ষেপ
-
মহাসমাবেশ পারে: মহাসমাবেশটি বর্তমান সরকারকে গেজেট প্রকাশে বাধ্য করতে বা অন্তত প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিতে বিশাল চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এটি পরবর্তী সরকারের ওপরও জনমতের চাপ সৃষ্টি করবে।
-
পরবর্তী সরকার পারে: যদি গেজেট প্রকাশ না হয়, তবে পরবর্তী সরকার সহজেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে। আর যদি গেজেট প্রকাশ হয়ে যায়, তবে বাতিল বা বড় পরিবর্তন আনা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

