সরকারি কর্মীদের ‘ছুটি’তেও নেই শান্তি: বাজারের চাপ ও সাংসারিক দুশ্চিন্তায় কাটছে উইকএন্ড
সরকারি কর্মীদের জন্য সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটি (শুক্র ও শনিবার) নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি এবং মাস শেষের অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা এই ছুটির আনন্দকে ম্লান করে দিচ্ছে। অনেক কর্মীই অভিযোগ করছেন, এই দিনগুলো বিশ্রামের বদলে পরিণত হয়েছে বাজারের হিসেব-নিকেশ ও সংসারের অন্যান্য ঝক্কি সামলানোর দিনে।
বিশ্রামের বদলে বাজারের তালিকা
অনেক সরকারি কর্মচারী মনে করেন, ছুটি মানেই এখন বাজার করা, মাস কাবারি জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করা এবং সেই অনুযায়ী সীমিত বেতনের মধ্যে ব্যয়ভার সামলানোর কঠিন অঙ্ক মেলানো। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য এই চাপ আরও প্রকট।
”আমার ছুটি শুরু হয় শুক্রবার সকালে,” বলেন সচিবালয়ের একজন সহকারী কর্মকর্তা, শফিকুর রহমান (ছদ্মনাম)। “কিন্তু সেটা ঘুম বা বিশ্রামের জন্য নয়। এক সপ্তাহ ধরে জমে থাকা বাজারের তালিকা, কোথায় কম দামে পাওয়া যায় সেই খোঁজ এবং আগামী মাসের বেতন আসার আগে পর্যন্ত কীভাবে টানা যায়—এই চিন্তাগুলোই সারা দিন মাথায় ঘুরপাক খায়। শনিবারও চলে সেই বাজারের ব্যাগ হাতে দৌড়াদৌড়ি আর জমে থাকা অন্যান্য কাজ।”
মূল্যস্ফীতির ধাক্কা
জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি সরকারি কর্মীদের বেতনের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। এই মূল্যস্ফীতির কারণে মাস শেষে সঞ্চয় দূরে থাক, মাসের শেষ দিনগুলো পার করাই অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
”ছুটির দিনে যখন স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের আবদার মেটাতে বলে, তখন কষ্ট হয়,” জানান অন্য এক কর্মচারী। “বেতন বাড়লেও তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জিনিসের দাম। ছুটির দিনে আনন্দের বদলে মনে হয় যেন পুরো মাসের আর্থিক দুশ্চিন্তা এই দু’দিনের মধ্যে এসে জমা হয়।”
মানসিক চাপ ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা
কর্মীদের অনেকে বলছেন, এই মানসিক চাপ তাঁদের পারিবারিক জীবনেও প্রভাব ফেলছে। বিশ্রামের অভাব ও আর্থিক দুশ্চিন্তায় অনেকে ছুটির দিনেও স্বাভাবিক থাকতে পারেন না, যার ফলে পরিবারের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানোও সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মজীবনের চাপ থেকে মুক্তি না পেলে তা কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকারি কর্মীদের প্রত্যাশা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যাতে বেতনের একটি বড় অংশ কেবল বাজার খরচেই শেষ না হয়ে যায়। তবেই দুই দিনের ছুটি হয়ে উঠবে সত্যি সত্যি শান্তি ও বিশ্রামের দিন।
