১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের চরম হতাশা ২০২৫ । ‘বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ে, শুধু আমাদের বেতন বাড়ে না’
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরকারি কর্মচারী, বিশেষ করে ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র হতাশা এবং ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে বেতনের সামঞ্জস্যহীনতা নিয়ে তারা প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তাঁদের মূল বক্তব্য—’বাস্তবে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, শুধু বাড়েনি আমাদের বেতন।’
জীবনযাত্রার ব্যয় ও বেতনের ফারাক
২০১৫ সালে সর্বশেষ অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় এক দশক। এই দীর্ঘ সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বহু গুণ। কিন্তু বেতনে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। ফেসবুক এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের কর্মচারীরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ২০তম গ্রেডের কর্মচারী ফেসবুকে লিখেছেন, “পে স্কেল হয় ১০ বছর পরপর। ইতিমধ্যে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তিন থেকে চারগুণ। যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে মাসের ১৫ দিনও চলা মুশকিল। বাসা ভাড়া, সন্তানের লেখাপড়া আর অসুস্থতার খরচ মেটানোর পর আর কিছু থাকে না।”
প্রধান হতাশার কারণগুলো:
- দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি: চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। কর্মচারীরা বলছেন, বাজারের এই আগুনে তাঁদের সীমিত বেতনের পুরোটাই পুড়ে যাচ্ছে।
- বাসা ভাড়া ও চিকিৎসা ব্যয়: বড় শহরগুলোতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। অন্যদিকে, চিকিৎসার খরচ মেড়াতে গিয়ে অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। বর্তমান চিকিৎসা ভাতা (মাসিক $১,৫০০) এই ব্যয়ের তুলনায় হাস্যকর বলে মনে করছেন তারা।
- বেতন বৈষম্য: উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তাদের সাথে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের বেতনের বিশাল ফারাক (প্রায় ১:১০ অনুপাত) নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ তীব্র। তাঁরা বলছেন, বৈষম্য না থাকলে উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তারা আগেই বেতন বৃদ্ধির দাবি করতেন, যার সুফল সাধারণ কর্মচারীরাও পেতেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড়
“১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম”-এর মতো বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন এবং সাধারণ কর্মচারীরা তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁরা নতুন পে-স্কেলে ১:৪ অনুপাতের দাবি জানালেও, কমিশন যদি ১:১০ অনুপাত বহাল রাখে, তবে বৈষম্য আরও বাড়বে এবং তাঁদের অর্থনৈতিক সংকট কাটবে না বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি গঠিত ‘জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫’ কে উদ্দেশ্য করে কর্মচারীরা আহ্বান জানিয়েছেন, শুধুমাত্র মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় না নিয়ে, একটি বাস্তবসম্মত ও মানবিক বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার জন্য, যাতে তাঁদের জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়। তাঁদের দাবি, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন না হলে তাঁরা আবারও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।

