দশ বছরে দুই পে-স্কেল: সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা কি?
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল একটি বহু প্রতীক্ষিত বিষয়। বিশেষ করে, ২০১৩ সালে প্রবর্তিত ৮ম পে-স্কেলের পর থেকে নতুন পে-স্কেলের ঘোষণা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। তবে, পে-স্কেল বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা অনেক সময় কর্মীদের মধ্যে হতাশার জন্ম দেয়।
যদি ২০২০ এবং ২০২৫ সালে দুটি পে-স্কেল বাস্তবায়িত হতো, তাহলে সে অনুযায়ী বেতন কাঠামো কেমন হতে পারত, তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ নিচে দেওয়া হলো:
২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী, একজন নতুন সরকারি চাকরিজীবীর সর্বনিম্ন বেসিক ছিল ৮,২০০ টাকা। যদি প্রতি পাঁচ বছর পর পর একটি পে-স্কেল কার্যকর হতো এবং সর্বনিম্ন বেসিক দ্বিগুণ হতো, তাহলে:
- ২০২০ সালের পে-স্কেলে: সর্বনিম্ন বেসিক হতে পারত ৮,২০০ টাকার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১৬,৪০০ টাকা।
- ২০২৫ সালের পে-স্কেলে: সর্বনিম্ন বেসিক হতে পারত ১৬,৪০০ টাকার দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৩২,৮০০ টাকা।
এই হিসাব অনুযায়ী, নবম পে-স্কেলে সর্বনিম্ন বেসিক ৩২,৮০০ টাকা হওয়া উচিত বলে অনেক কর্মচারী মনে করেন। তবে, এটি একটি অনুমিত হিসাব মাত্র। বাস্তবে, পে-স্কেল নির্ধারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতি, সরকারি রাজস্ব এবং অন্যান্য অনেক বিষয় বিবেচনা করা হয়।
নবম পে-স্কেল: কতটা বাস্তবসম্মত?
সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ নবম পে-স্কেল ঘোষণার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তাদের মূল দাবি হলো, চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেন একটি নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যাশা হলো, নতুন পে-স্কেল শুধু বেতনের পরিমাণ বাড়াবে না, বরং জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে সহায়ক হবে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি পাঁচ বছর পর পর পে-স্কেল দ্বিগুণ করা হলে তা সরকারের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে। এ কারণে, সরকার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পে-স্কেলের হার নির্ধারণ করে, যেখানে মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনা করা হয়।
মূল বেতন ২৫-৩০ হাজার হলে কেমন হয়?
সর্বনিম্ন ২৫-৩০ হাজার টাকা বেসিকের দাবিটি একটি বাস্তবসম্মত দাবি বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় এই পরিমাণ বেসিক সরকারি কর্মচারীদের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনবে।
যদি নবম পে-স্কেল এই পরিমাণ বেসিক নিয়ে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা শুধু সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানই উন্নত করবে না, বরং সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কেবল পে-স্কেল বৃদ্ধি করাই যথেষ্ট নয়, বরং দুর্নীতির মূলোৎপাটনও একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। আপনার যুক্তির ভিত্তিতে, যদি গত ১০ বছরে ১২০% বৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত হয়, তাহলে সর্বনিম্ন মূল বেতন কত হতে পারে তা আমরা হিসাব করতে পারি:
যদি ২০১৫ সালের সর্বনিম্ন বেসিক ৮২০০ টাকা হয়:
- ৮২০০ টাকার ১২০% বৃদ্ধি মানে ৮২০০ * ২.২ = ১৮০৪০ টাকা বৃদ্ধি।
- তাহলে নতুন সর্বনিম্ন বেসিক হবে ৮২০০ + ১৮০৪০ = ২৬,২৪০ টাকা।
এই হিসাবে, সর্বনিম্ন মূল বেতন ২৬,২৪০ টাকা হওয়া উচিত। এটি আপনার পূর্বে উল্লেখিত ২৫-৩০ হাজার টাকার মধ্যে পড়ে এবং বর্তমান মূল্যস্ফীতির চাপ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
কেন এই বৃদ্ধি জরুরি এবং এর প্রভাব কী হতে পারে?
- জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: ১২০% বৃদ্ধি সরকারি কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে এবং মূল্যস্ফীতির কারণে সৃষ্ট আর্থিক চাপ মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।
- কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত বেতন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা, যা কর্মচারীদের মধ্যে কর্মোদ্দীপনা বাড়ায় এবং তাদের কাজকর্মে আরও মনোযোগী করে তোলে। এটি সরকারি সেবার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।
- দুর্নীতি হ্রাসের সম্ভাবনা: যদিও বেতন বৃদ্ধি দুর্নীতির একমাত্র সমাধান নয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যখন কর্মচারীরা মনে করেন যে তাদের বেতন যথেষ্ট নয়, তখন দুর্নীতির প্রতি তাদের প্রবণতা বাড়তে পারে। একটি ন্যায্য বেতন তাদের অনৈতিক উপার্জনের প্রলোভন থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
- অর্থনীতির চাকা সচল: সরকারি কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে তা অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ায়, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়ক হয়।
তবে, আপনার উল্লেখ করা দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেবল বেতন বাড়ালেই দুর্নীতি দূর হবে না, এর জন্য কঠোর নজরদারি, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োজন। সরকার যদি এই দুটি বিষয় (যথাযথ বেতন বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি দমন) একযোগে বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে তা দেশের সামগ্রিক প্রশাসনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।