পে স্কেল ২০২৬: গ্রেড সংখ্যা কমানোর আলোচনা, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে গ্রেড নির্ধারণের প্রস্তাব
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত নতুন বেতন কাঠামো, যা ‘পে স্কেল ২০২৬’ নামে পরিচিত, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট গ্রেড নির্ধারণের মতো বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে চলছে জোর পর্যালোচনা। সাধারণ চাকরিপ্রার্থী এবং সংশ্লিষ্ট মহলের পক্ষ থেকে বর্তমান গ্রেড কাঠামো সরলীকরণের দাবি উঠেছে।
শিক্ষাগত যোগ্যতাভিত্তিক গ্রেড প্রস্তাব
বর্তমানে ২০টি গ্রেড প্রচলিত থাকলেও, আপনার মতো অনেক মতামতদাতা শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে গ্রেডকে সুসংহত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। আপনার প্রস্তাব অনুযায়ী, নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে মাত্র ৫টি সুনির্দিষ্ট গ্রেড থাকতে পারে, যা নিম্নরূপ:
-
৮ম শ্রেণী পাশে নিয়োগ: ১টি গ্রেড
-
এসএসসি (SSC) পাশে নিয়োগ: ১টি গ্রেড
-
এইচএসসি (HSC) পাশে নিয়োগ: ১টি গ্রেড
-
স্নাতক (Bachelor) পাশে নিয়োগ: ১টি গ্রেড
-
বিসিএস (BCS) নিয়োগ: ১টি গ্রেড
এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হলো, একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বেতন বৈষম্য দূর করা এবং গ্রেড কাঠামোকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করে তোলা। এটি বাস্তবায়িত হলে গ্রেডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি প্রক্রিয়াও সরল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কমিশনের আলোচনা: ২০ থেকে ১২-১৫ গ্রেড
জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫, ইতোমধ্যে নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশমালা জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রচলিত ২০টি গ্রেড থেকে সংখ্যা কমিয়ে ১২টি বা ১৫টিতে নিয়ে আসার প্রাথমিক আলোচনা চলছে।
-
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত: কমিশন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত বর্তমানে থাকা প্রায় ১০:১ থেকে ৮:১ থেকে ১০:১ এর মধ্যে রাখার চিন্তাভাবনা করছে।
-
ভাতা বৃদ্ধি: চিকিৎসা ভাতা ও শিক্ষা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতাও বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়
নতুন পে স্কেল ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই কার্যকর হতে পারে বলে অর্থ উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আগে জানানো হয়েছিল। তবে, সাম্প্রতিক মন্তব্যে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার কেবল কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে এবং আগামী নির্বাচিত সরকার নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করবে।
আপনার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে গ্রেড নির্ধারণের প্রস্তাব একটি যুগোপযোগী ভাবনা, যা গ্রেড সংখ্যা কমানোর কমিশনের চিন্তাধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই ধরনের সুসংহত গ্রেড কাঠামো সরকারি কর্মীদের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের জটিলতা ও অসন্তোষ দূর করতে সহায়ক হতে পারে। কমিশন জনমত ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামত নিয়ে তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।
এতে কি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে?
প্রস্তাবিত গ্রেড কাঠামো, যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ৫টি গ্রেড থাকবে, তাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এখানে এর সম্ভাব্য প্রধান ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হলো:
১. ⚖️ বেতন বৈষম্য হ্রাস ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা
-
সুস্পষ্ট নিয়োগ স্তর: একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় (যেমন, SSC পাশে নিয়োগ) প্রবেশ করা সকল কর্মী একই প্রাথমিক গ্রেডে থাকবেন, যা সমযোগ্যতা সম্পন্ন কর্মীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য তাৎক্ষণিকভাবে কমিয়ে আনবে।
-
কর্মচারীদের সন্তুষ্টি: এটি কর্মীদের মধ্যে গ্রেডিং প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও অসন্তোষ দূর করবে, কারণ তারা জানবেন যে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের গ্রেড ন্যায্যভাবে নির্ধারিত হয়েছে।
২. ️ প্রশাসন ও গ্রেড ম্যানেজমেন্টের সরলীকরণ
-
সহজ কাঠামো: ২০টি গ্রেডের পরিবর্তে মাত্র ৫টি গ্রেড থাকলে, বেতন কাঠামো পরিচালনা এবং গ্রেডিং সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করা অনেক সহজ হবে।
-
স্বচ্ছতা বৃদ্ধি: কাঠামোটি সরল হওয়ায় কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারবে কোন যোগ্যতার জন্য কোন গ্রেড নির্ধারিত। এতে অস্বচ্ছতা দূর হবে।
-
পদোন্নতির সরল প্রক্রিয়া: একই গ্রেডের মধ্যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) এবং উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতার গ্রেডে পদোন্নতি (বা আপগ্রেডেশন) এর প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সরল করা যেতে পারে।
৩. নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দক্ষতা বৃদ্ধি
-
নিয়োগের লক্ষ্য স্থির করা: নিয়োগ কর্তৃপক্ষ সহজেই বুঝতে পারবে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে এবং কোন গ্রেডে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
-
আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্র: উচ্চতর ডিগ্রিধারীরা জানবেন যে তারা একটি নির্দিষ্ট গ্রেডেই প্রবেশ করছেন, যা তাদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হতে পারে।
৪. দীর্ঘমেয়াদী কর্মজীবনের পরিকল্পনা
-
ক্যারিয়ার পথ: ৫টি স্তর থাকায় কর্মীরা তাদের কর্মজীবনের শুরুতেই পরবর্তী গ্রেডে যাওয়ার সুস্পষ্ট পথ দেখতে পাবেন। যেমন, একজন HSC পাশ কর্মী যদি পরবর্তীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, তবে তিনি সরাসরি স্নাতক স্তরের গ্রেডে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
সংক্ষেপে ইতিবাচক প্রভাব
| প্রভাবের ক্ষেত্র | বর্ণনা |
| ন্যায্যতা | একই যোগ্যতায় নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে বেতন বৈষম্য দূর হবে। |
| স্বচ্ছতা | গ্রেড কাঠামো বুঝতে ও পরিচালনা করতে সুবিধা হবে, জটিলতা কমবে। |
| সরলীকরণ | ২০টির বদলে ৫টি গ্রেড হওয়ায় প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস পাবে। |
| মনোবল | কর্মীদের মধ্যে সন্তুষ্টি বাড়বে এবং তারা নিজেদের গ্রেড নিয়ে ন্যায্য মনে করবে। |
তবে, এই কাঠামো বাস্তবায়ন করতে গেলে কর্মীর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং পদের গুরুত্বকে এই ৫টি স্তরের মধ্যে কীভাবে সুসংহত করা হবে—সেটাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

