নতুন পে-স্কেল প্রণয়ন: সচিবদের সাথে কমিশনের ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনা, দ্রুত রিপোর্ট তৈরির আশা
ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫: নতুন সরকারি বেতন কাঠামো-২০২৫ প্রণয়নের লক্ষ্যে জাতীয় বেতন কমিশন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবদের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক গত সোমবার (২৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত জাতীয় বেতন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক চলে।
সভা শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে। যদিও সব সচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না, তবে অনুপস্থিতদের নিয়ে পরবর্তীতে আবারও আলোচনা হবে। সুপারিশ জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আলোচনা শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিতে পারব।”
মূল আলোচনা ও মতবিনিময়
বৈঠক সূত্র অনুযায়ী, নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সচিবদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করেছে কমিশন। সচিবরাও তাদের দিক থেকে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন এবং নিজস্ব মতামত পেশ করেছেন। সূত্রটি আরও জানায়, কমিশন এই বক্তব্যগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং প্রয়োজনের আলোকে তা পরবর্তীতে সুপারিশসমূহে সংযুক্ত করা হবে।
কাজের শেষ ধাপ?
জানা যায়, সচিবদের সঙ্গে এই বৈঠকটি ছিল কমিশনের কাজের শেষ ধাপের বৈঠক, কারণ তাদের মতামতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এর আগে, কমিশন বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করে তাদের প্রস্তাবনা সংগ্রহ করেছিল। এসব প্রস্তাব ইতোমধ্যে খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বর্তমান বৈঠকে সেই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নতুন পে-স্কেল কেমন হতে পারে এবং কবে থেকে তা কার্যকর করা সম্ভব—এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
কর্মচারীদের আল্টিমেটাম
এদিকে, বেতন কমিশনকে দ্রুত সুপারিশ দাখিলের জন্য কর্মচারী নেতাদের পক্ষ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুপারিশ জমা না দেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন তারা। পে-স্কেল দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মচারীরা আগামী ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
কমিশনের প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ের শেষ দিকে সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে ২৩ সদস্যের জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫ গঠন করে সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কমিশনের প্রথম সভার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। কমিশন এর আগে ১ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণ নাগরিক এবং বিভিন্ন সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনলাইনে প্রশ্নমালার মাধ্যমে মতামত সংগ্রহ করেছিল।
পে স্কেল কবে দিবে?
নতুন সরকারি পে স্কেল-২০২৫ কবে নাগাদ কার্যকর হবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পে স্কেল বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে বেশ কিছু তথ্য ও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে:
১. পে কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার সময়
-
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ, ২০২৫: জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫ চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দিতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
-
৩০ নভেম্বর আল্টিমেটাম: কর্মচারী নেতারা কমিশনকে ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন। কমিশন চেয়ারম্যানও ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে’ রিপোর্ট জমা দেওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।
-
৬ মাসের সময়সীমা: কমিশনকে জুলাই ২০২৫ থেকে তাদের প্রথম সভার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
২. পে স্কেল কার্যকর হওয়ার সম্ভাব্য সময়
-
জানুয়ারি ২০২৬: বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নতুন বেতন স্কেল ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেতে পারেন।
-
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নতুন বেতন কাঠামো অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এর জন্য পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না।
সংক্ষেপে যা জানা যাচ্ছে:
-
সুপারিশ জমা: আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই কমিশনের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা হবে।
-
বাস্তবায়ন: নতুন পে স্কেল সম্ভবত ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কার্যকর করা হতে পারে।
এই তথ্যগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য থেকে সংগৃহীত। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

