সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াতে পিপিআর, ২০২৫ । আরএফকিউ পদ্ধতির নতুন আর্থিক সীমা নির্ধারণ করেছে সরকার?
সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সদ্য কার্যকর হওয়া পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর), ২০২৫-এ কোটেশন প্রদানের অনুরোধ জ্ঞাপন (RFQ) পদ্ধতির আওতায় ক্রয়সীমা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধি-৯০(১) এবং ৯০(৬) অনুযায়ী এই পদ্ধতিতে পণ্য, কার্য ও ভৌতসেবা ক্রয়ের নতুন আর্থিক সীমা নির্ধারণ করে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নতুন বিধিমালার এই পরিবর্তন সরকারি অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
RFQ পদ্ধতির নতুন আর্থিক মূল্যসীমার সার-সংক্ষেপ
পিপিআর, ২০২৫ এর বিধি-৯০(১) অনুযায়ী কোটেশন প্রদানের অনুরোধ জ্ঞাপন (RFQ) পদ্ধতিতে পণ্য, কার্য এবং ভৌতসেবা ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তর ও বাজেট পদ্ধতির ভিত্তিতে এই মূল্যসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে:
১. বাজেট: পরিচালন (Revenue Budget)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রকল্পের বাজেট পদ্ধতির আওতায় ক, খ, গ শ্রেণির প্রকল্প পরিচালকের সংজ্ঞা সরকারি আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ, ২০২০ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
জাতীয় পতাকাবাহী বাহনের জন্য বিশেষ বিধান
বিধি-৯০(৬) অনুযায়ী, বিশেষভাবে জাতীয় পতাকাবাহী বাহনের (National Flag Carrier) জন্য কোটেশন প্রদানের অনুরোধ জ্ঞাপন (RFQ) পদ্ধতিতে প্রতিটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক মূল্যসীমা সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিশেষ বিধানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সীমা নিশ্চিত করা হয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ের ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষমতার ব্যাখ্যা
পিপিআর, ২০২৫-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে: যদি কোনো উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ উপজেলা পর্যায় থেকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ (যেমন: জেলা/আঞ্চলিক দপ্তর) থেকে উৎকলন (Draw down) করা হয়, সেক্ষেত্রে কি ক্রয়কারী কর্মকর্তা উন্নয়ন বাজেটের জন্য নির্ধারিত মূল্যসীমা ব্যবহার করতে পারবেন?
বিধি ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পণের কাঠামো অনুসারে, আর্থিক ক্ষমতা মূলত ক্রয়কারী কর্মকর্তা বা দপ্তর প্রধানের পদের এখতিয়ার এবং বাজেটের উৎসের ওপর নির্ভর করে।
- উপজেলা পর্যায়ের দপ্তর প্রধানের আর্থিক ক্ষমতা (পরিচালন বাজেট) ৩ লক্ষ টাকা (পণ্য) এবং ৫ লক্ষ টাকা (কার্য ও ভৌতসেবা) পর্যন্ত।
- উন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে আর্থিক সীমা প্রকল্প পরিচালক পদের এখতিয়ারে থাকে।
যদি কোনো ক্রয় উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত হয়, কিন্তু তহবিল উর্ধতন দপ্তর থেকে আসে, তবে সাধারণ নীতি হলো— ক্রয়কারী কর্মকর্তা তার নিজস্ব পদের জন্য নির্ধারিত আর্থিক ক্ষমতাই ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ, উর্ধতন দপ্তর থেকে তহবিল এলেও, উপজেলা পর্যায়ের দপ্তর প্রধান উন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ‘উপজেলা পর্যায়ের দপ্তর’-এর আর্থিক সীমা (যদি প্রযোজ্য হয়) অথবা সর্বোচ্চ পরিচালন বাজেটের সীমা (যদি উন্নয়ন বাজেটটি সরাসরি তার এখতিয়ারে না আসে) ব্যবহার করবেন।
যদি এই উন্নয়ন বাজেট কোনো প্রকল্পের আওতায় থাকে এবং উপজেলা পর্যায়ের দপ্তর প্রধান সেই প্রকল্পের খ বা গ শ্রেণির প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তবে তিনি সেই শ্রেণির প্রকল্প পরিচালকের জন্য নির্ধারিত মূল্যসীমা (খ-শ্রেণি: পণ্য ৮ লক্ষ; কার্য/ভৌতসেবা ১২ লক্ষ বা গ-শ্রেণি: পণ্য ৬ লক্ষ; কার্য/ভৌতসেবা ১২ লক্ষ) ব্যবহার করতে পারবেন।
সুতরাং, শুধু তহবিল উৎকলন হলেই উচ্চতর আর্থিক ক্ষমতা প্রয়োগ করা যাবে না; বরং সংশ্লিষ্ট ক্রয়কারী কর্মকর্তা কোন পদমর্যাদার আর্থিক ক্ষমতা প্রাপ্ত, সেটাই এক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয়। এই ব্যাখ্যা সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে স্তরভিত্তিক আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।