সর্বশেষ প্রকাশিত

সরকারি কর্মচারীদের পে-স্কেল নিয়ে হতাশা ২০২৫ । বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে বেতনের ‘আকাশ-পাতাল’ ব্যবধান, দ্রুত নতুন কাঠামো প্রণয়নের দাবি

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বর্তমান পে-স্কেলের সঙ্গে দেশের চলমান বাজার ব্যবস্থার আকাশ-পাতাল বৈসাদৃশ্য নিয়ে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিধি মোতাবেক প্রতি ৫ বছর অন্তর পে-স্কেলকে সমসাময়িক বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার বিধান থাকলেও, সর্বশেষ ২০১৫ সালে কার্যকর হওয়া পে-স্কেলের পর প্রায় দশ বছর পেরিয়ে গেলেও ২০২৫ সালেও নতুন কোনো বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামোর নির্দেশনা মেলেনি। এই দীর্ঘসূত্রিতা সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে।

দীর্ঘদিনের এই বঞ্চনা নিরসনে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগী হয়ে একটি পে-কমিশন গঠন করেছে, যাদের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে অনূর্ধ্ব ছয় মাস। কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে ভরসার ভাষা শোনা গেলেও, এর কচ্ছপ গতির অগ্রগতি নিয়ে সরকারি শিক্ষিত মহলে সন্দেহ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এটি হয়তো সরকারি কাজে নিয়োজিতদের সাময়িকভাবে শান্ত রাখার একটি কূটকৌশল মাত্র। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যুতসই ও ত্বরিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।

বিশাল বেতন বৈষম্য ও গ্রেড সংখ্যা কমানোর দাবি

বর্তমানে বাংলাদেশে ২০টি গ্রেডে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হয়। এই অধিক গ্রেড সংখ্যা নিম্নতম এবং উচ্চতম কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিশাল বেতন বৈষম্য জিইয়ে রাখার নামান্তর, যা একটি ফাউল সিস্টেমের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

  • বিশাল বৈষম্য: ২০তম গ্রেডের একজন সরকারি চাকুরে যেখানে মাস শেষে মাত্র ৮,৫০০ টাকা মাইনে পাচ্ছেন, সেখানে ১ম গ্রেডধারী তার অন্তত দশগুণ বেশি সম্মানী নিচ্ছেন।
  • গ্রেড কমানোর প্রস্তাব: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেকেলে এই ২০টি গ্রেডের কোনো কার্যকারিতা নেই। বেতন বৈষম্য দূর করতে গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ১০টি কিংবা ১২টিতে নামিয়ে আনা সময়ের দাবি।
  • বেতন অনুপাত: একইসঙ্গে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত (রেশিও) ১:৪-এর বেশি হওয়া উচিত নয় বলেও জোর দাবি উঠেছে। অধিক গ্রেড থাকার কারণে বৈষম্য দূর না হয়ে বরং আরো প্রকটভাবে প্রকাশ পাওয়ায় জনমনে পে-স্কেল নিয়ে বিতৃষ্ণার জন্ম হচ্ছে, যা দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্য শুভ নয়।

বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো এবং ন্যূনতম বেতনের প্রস্তাব

নবগঠিত পে-কমিশনের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হলো একটি যথার্থ ন্যায়ভিত্তিক বেতন কাঠামো দাঁড় করানো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চলমান রানিং মার্কেট ভ্যালু বিবেচনা করে বাস্তবসম্মতভাবে বেতন কাঠামো বিনির্মাণ করা।

  • ন্যূনতম বেতন দাবি: কমিশনের আলোচনা ও বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সাদৃশ্য রাখতে, ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের ব্যয়ভার বহনের জন্য ন্যূনতম ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার একটি পে-স্কেল নির্ধারণ করা আবশ্যক। এর কম কিছু নির্ধারণ করা হলে তা সরকারি কর্মচারীদের ফের পূর্বের বেহাল দশায় নিমজ্জিত রাখার সরকারি বন্দোবস্ত হাতে নেওয়ার শামিল হবে।

‘২০২৪ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে’ ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ কায়েমের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে, উপরোক্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে অতিসত্বর নতুন পে-স্কেল কার্যকরের জোর দাবি জানানো হচ্ছে। সরকারি কার্যাদি পরিচালনায় নিয়োজিতদের অভুক্ত অভাব-অনটনের ডেরায় ডুবিয়ে রেখে কোনো দেশই ‘সোনার বাংলা’য় রূপান্তর হতে পারে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *