সর্বশেষ প্রকাশিত

নবম পে-স্কেলের দ্বারপ্রান্তে সরকার: তথ্য সংগ্রহে অনলাইন জরিপ আসছে

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন স্কেল (পে-স্কেল) নির্ধারণের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এই লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ তাদের কার্যক্রম জোরদার করেছে এবং শিগগিরই নতুন বেতন কাঠামো সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা-সংক্রান্ত তথ্য জানতে অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হবে। গত ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে পরিসংখ্যান ভবনে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা সভায় এই জরিপ পরিচালনা ও তথ্য বিশ্লেষণের বিষয়ে আলোচনা হয়। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অনলাইন জরিপের জন্য প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ চলছে বলে জানানো হয়।

জরিপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএস এই তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে, যা জাতীয় বেতন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই কমিশন নতুন বেতন কাঠামো সম্পর্কে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করবে।

নিয়মতান্ত্রিক এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নতুন পে-স্কেল নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা বৃদ্ধি পেয়েছে।

“দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে”: ১০ বছর পর নতুন পে-স্কেল না পাওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের তীব্র হতাশা, ৩৫ হাজার টাকা সর্বনিম্ন বেসিকের দাবি। বৈষম্যহীন সরকারের কাছে ন্যায্য অধিকারের জোর দাবি, জীবনমানের অবমূল্যায়নে ক্ষুব্ধ কর্মচারীরা। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নতুন পে-স্কেল না পাওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের জীবনে নেমে এসেছে চরম হতাশা ও আর্থিক দুর্দশা। যেখানে নিয়ম অনুযায়ী দুটি পে-স্কেল কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ২০১৫ সালের স্কেলেই আটকে আছে কোটি সরকারি কর্মচারীর জীবন। এই দীর্ঘসূত্রিতা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে কর্মচারীদের জীবনমান এতটাই বিপন্ন হয়েছে যে, তাদের ‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। বর্তমান সরকারের বৈষম্যহীনতার অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কর্মচারীরা বলছেন, “ক্ষমতায় আছেন বৈষম্যহীন সরকার, এখনই ন্যায্য অধিকার আদায়ের সময়।” তাদের অভিযোগ, দেশের সব ক্ষেত্রে মূল্যায়িত হলেও শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনমানের কোনো মূল্যায়ন নেই, যা ১০০% বাস্তবতা।

নবম জাতীয় পে-স্কেল নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় অনলাইন জরিপ শুরু হওয়ার তোড়জোড় চললেও, সরকারি কর্মচারীদের চাপা ক্ষোভ ও বঞ্চনার প্রকৃত চিত্র কোনো সংখ্যাভিত্তিক হিসাবে ধরা পড়বে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন এবং ভুক্তভোগীদের মতে, তাদের জীবনের দুঃখ, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ কোনো জরিপের প্রশ্নমালায় পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

কর্মচারীদের বিভিন্ন মন্তব্য ও বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে, জরিপের বাইরেও তাদের জীবনে বহু কঠিন বাস্তবতা বিদ্যমান, যা কেবল সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। তাদের মতে—জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে ১৮ লক্ষাধিক কর্মচারী ঋণের বোঝায় ডুবে আছেন, যাদের কিস্তির চাপ জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ভাতার অভাবে অনেক কর্মচারী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন বা সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগাতে গিয়ে চরম হিমশিম খাচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে ভাড়াবাড়িতে অনিশ্চিত জীবন কাটানো, ঈদে পশু কোরবানি দিতে না পারা, কিংবা বছরে একবারও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে যেতে না পারার মতো সামাজিক বঞ্চনা ও লজ্জা তাদের হৃদয়ে গভীর বেদনা সৃষ্টি করে।

Caption: Pay scale online Survey

সরকারি কর্মচারীদের সুনির্দিষ্ট দাবি ২০২৫ । এই চরম দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে সরকারি কর্মচারীরা বর্তমান পে-কমিশন ও সরকার প্রধানের কাছে নিম্নলিখিত জোর দাবিগুলো তুলে ধরেছেন:

  1. সর্বনিম্ন বেসিক ৩৫ হাজার টাকা: সর্বনিম্ন বেসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
  2. বেতন ১:৪ অনুপাতে: সকল গ্রেডে বেতন ১:৪ অনুপাতে নির্ধারণ করতে হবে।
  3. গ্রেড সংখ্যা হ্রাস: গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ১০ অথবা ১২টিতে আনতে হবে।
  4. ভাতা বৃদ্ধি: শিক্ষা ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ধোলাই ভাতা ও বাড়ি ভাড়া বর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে।
  5. রেশনিং ব্যবস্থা চালু: বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সকল কর্মচারীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।  
  6. কর্মচারীরা বলছেন, তাদের এই হতাশা, কষ্ট ও বঞ্চনা কোনো সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। এটি প্রতিটি কর্মচারীর হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক গভীর বেদনা। এই বেদনা থেকেই তারা ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়েছেন, কারণ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো আজ অস্বীকৃত ও অপূর্ণ।

অভাব ও বঞ্চনার চিত্র জানেন?

কর্মচারীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের করুণ চিত্র তুলে ধরে বলেন “আমরা না পারি ছেলে মেয়ের মুখে ভালো কোনো খাবার দিতে, না পারি ভালো কোনো পোশাক পরাতে, না পারি ভালো কোনো স্কুল কলেজে ভর্তি করাতে?” সকাল ৮টা-৯টা থেকে শুরু করে অফিসের দীর্ঘ সময় পার করে সবার শেষে বাসায় ফেরা এই কর্মচারীদের জীবনে “নুন আনতে পান্তা ফুরায়” অবস্থা। এক রিকশাচালক ৪-৫ দিনে যেখানে ৮২৫০ টাকা উপার্জন করেন, সেখানে অনেক সরকারি কর্মচারী ২০১৫ সাল থেকে একই পরিমাণ টাকা মাস শেষে বেতন হিসেবে পাচ্ছেন, যা তাদের কাছে অকল্পনীয় অবহেলা। দেশের ক্রিকেটাররা যেখানে লাখ লাখ টাকা বেতন পান, সেখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও সরকারি কর্মচারীদের কেবল “চোখের পানি মুছতে” হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং ২০১৫ সালের বাস্তবতা: ২০১৫ সালে যখন সর্বশেষ পে-স্কেল ঘোষিত হয়েছিল, তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ছিল একরকম। কিন্তু আজ তা ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অনুপাতে বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায় কর্মচারীদের জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোর সাথে বর্তমান সময়ের কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *