নতুন বেতন কাঠামোর প্রস্তাবনা ২০২৫ । জাতীয় পে-কমিশনের প্রতিবেদন ডিসেম্বরে?
জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫ সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামোর প্রতিবেদন ডিসেম্বরের মধ্যে পেশ করবে । সীমিত সম্পদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে সেখানে । জাতীয় বেতন কমিশনের সভাপতি সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান রোববার অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন ।
খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের । জাতীয় পে-কমিশন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অর্থ বিভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতারা নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে ১৩টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বেতন অনুপাত ও কাঠামো প্রস্তাবনা নতুন বেতন কাঠামোতে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার অনুপাত হবে ১:৬ হারে । বর্তমানে এই হার আছে ১:১০ , যেখানে সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা । সমিতি ১:৬ হার নির্ধারণ করতে বলেছে যাতে বড় কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের বেতন বৃদ্ধি এবং ছোটদের একেবারেই কম বৃদ্ধি – এমন বৈষম্য যেন না হয় । কমিশন সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, তারা চাকরিজীবীদের বেতন সমান অনুপাতে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
এছাড়াও, ‘সাকুল্য বেতন’ বা ‘পারিশ্রমিক’ নামে বিকল্প বেতন কাঠামো গঠনের কথা বলা হয়েছে । এই বিকল্প কাঠামোতে বিদ্যমান বেতন কাঠামোর ভাতাসহ আর্থিক ও অনার্থিক কোনো সুবিধাই থাকবে না ।
ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল আলম জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা, টিফিন ও যাতায়াত ভাতা বাড়ানোর যৌক্তিকতা কমিশনের সামনে তুলে ধরা হয়েছে ।
- বর্তমানে একজন অফিস সহায়ক ৮ হাজার ২৫০ টাকা বেসিক পান । এই বেসিকে পাওয়া বাসা ভাড়া দিয়ে ঢাকার নিম্নাঞ্চলের বস্তিতেও থাকা সম্ভব নয় । একই পদে গ্রামে নিজ বাড়িতে থাকা ব্যক্তির জন্য এই বাড়ি ভাড়া বাড়তি সুবিধা । এই বৈষম্যগুলো সমন্বয় করতে বলা হয়েছে ।
- টিফিন ভাতা মাসে ২০০ টাকা এবং যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা দেওয়া হয়। এই হিসাবে দৈনিক টিফিন ভাতা ৯ টাকা এবং যাতায়াত ভাতা ১৩ টাকা পাওয়া যায়, যা দিয়ে কিছুই হয় না এবং রিকশা ভাড়া বা বাস ভাড়াও মেটানো সম্ভব নয় ।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা
- গ্রেড প্রদান: কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রতি চার বছর অন্তর একটি গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে । বর্তমানে ১০ বছর অন্তর ও ১৬ বছর পর দুটি উচ্চতর গ্রেড দেওয়া হচ্ছে ।
- বিশেষ ভাতা ও সুবিধা: সচিবালয়ে নিয়োজিত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ‘সচিবালয় ভাতা’ এবং ‘রেশন সুবিধা’ চালুর কথা বলা হয়েছে, কারণ সচিবালয়ের জনবল সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় মূল চালিকাশক্তি । অন্য যেসকল কার্যালয় এরূপ সুবিধা দেয় তার মধ্যে রয়েছে:
- রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ‘টিপটপ ভাতা’ ।
- সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনী, দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োজিত জনবলের জন্য ‘রেশন সুবিধা’ ও ‘ঝুঁকি ভাতা’ ।
- জুডিশিয়ারি ক্যাডারভুক্তদের জন্য ‘বিশেষ ভাতা’ ।
- অন্যান্য: প্রতিবছর শ্রান্তি বিনোদনের জন্য ৭ দিন ছুটির প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আলী খান সমর্থন করেন । এছাড়াও টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বিশেষ ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য সুবিধা পুনর্বহাল , বিদ্যমান বেতন স্কেলের অপ্রয়োজনীয় গ্রেড বাদ দিয়ে মোট ১২টি গ্রেড নির্ধারণ , ‘নববর্ষ ভাতা’র হার মূল বেতনের ৮০ শতাংশ নির্ধারণ , ‘স্বাস্থ্যবিমা’ চালু , এবং কর্মচারীদের করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রদত্ত করের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর ‘পেনশন’-এর প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বৈঠকে কমিশনের সদস্য সাবেক সচিব তাহমিনা বেগম এবং সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. মোসলেম উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডিসেম্বরে প্রতিবেদন দিলে গেজেট জারি হবে কবে?
জাতীয় পে-কমিশনের প্রতিবেদন ডিসেম্বরে পেশ করা হলে, নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট জারি সাধারণত পরের বছরের শুরুর দিকে হতে পারে। সাম্প্রতিক সংবাদ প্রতিবেদন এবং অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার চলতি মেয়াদের মধ্যেই নতুন পে-স্কেল গেজেট আকারে প্রকাশ এবং তা কার্যকর করার পরিকল্পনা করেছে।
- প্রতিবেদন জমা: কমিশন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে।
- গেজেট জারির প্রত্যাশিত সময়: সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে আগামী বছরের শুরু (জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির দিকে) থেকেই সরকারি চাকরিজীবীরা নতুন কাঠামোর সুবিধা পেতে পারেন।
অতীতে, পে-কমিশন প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় কয়েক মাস সময় লেগেছিল। তবে, বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুত গেজেট জারির সম্ভাবনা রয়েছে, যাতে এটি আগামী বছরের শুরু থেকেই কার্যকর করা সম্ভব হয়।

