সর্বশেষ প্রকাশিত

নবম পে স্কেল ২০২৫ । মানবিক বিবেচনার দাবি, ঢাকা শহরে টিকে থাকতে সর্বনিম্ন বেতন কত হওয়া উচিত?

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নবম জাতীয় বেতন স্কেল (পে স্কেল) প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, পে কমিশন এবং পে স্কেলের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রতি সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষ থেকে একটি মানবিক ও বিবেকবোধ-তাড়িত আবেদন জানানো হয়েছে। মূল দাবিটি হলো— ঢাকা শহরের মতো ব্যয়বহুল স্থানে ৪ বা ৬ সদস্যের একটি পরিবারকে সম্মানের সঙ্গে জীবনধারণ করতে সর্বনিম্ন বেতন কত হওয়া উচিত?

আবেদনকারী তাঁর যুক্তিতে উল্লেখ করেছেন, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব (‘আশরাফুল মকলুকাত’), কারণ আল্লাহ মানুষকে বিবেক দিয়েছেন। ৮৫,০০০ প্রজাতির মধ্যে একমাত্র মানুষকেই ‘আয় করে খাবার কিনে’ খেতে হয়, যেখানে অন্যান্য প্রাণীকে আল্লাহ বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করেন। এই গভীর মানবিক ও দার্শনিক বিবেচনায়, সর্বনিম্ন বেতন এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত যাতে একজন মানুষ তার পরিবারকে নিয়ে ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে পারে।

️ ঢাকা শহরে জীবনধারণের বাস্তব চিত্র

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

  • খাবার খরচ: সিপিডি’র হিসাব (২০২৩ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী) অনুযায়ী, রাজধানীতে ৪ সদস্যের একটি পরিবারের শুধুমাত্র খাবারের পেছনে মাসিক ব্যয় প্রায় ২২,৬৬৪ টাকা
  • কম্প্রোমাইজড ডায়েট: মাছ-মাংস বাদ দিয়ে ন্যূনতম খাবার (কম্প্রোমাইজড ডায়েট) কিনতেও প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় ৭,১৩১ টাকা
  • অন্যান্য খরচ: এই হিসাবটি শুধুমাত্র খাবারের, এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা, যাতায়াত এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর ব্যয় যোগ করলে মোট জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বহুগুণ বেড়ে যায়।

একটি ৪ বা ৬ সদস্যের পরিবারের জন্য, খাবারের খরচের সঙ্গে ঢাকা শহরে ঘর ভাড়া, সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য মৌলিক খরচ যোগ করলে মোট মাসিক ব্যয় সহজেই ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা বা তারও বেশি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

নবম পে স্কেলে সর্বনিম্ন বেতনের প্রস্তাবনা

বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে নবম পে স্কেলে সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণের জন্য একাধিক প্রস্তাবনা এসেছে।

পক্ষ সর্বনিম্ন বেতনের প্রস্তাবনা সর্বোচ্চ বেতনের প্রস্তাবনা
সরকারি কর্মচারী সংগঠনসমূহ ৩৫,০০০ টাকা ১,৪০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ২৫,০০০ টাকা ১,৫০,০০০ টাকা

কিছু প্রস্তাবনায় পে-স্কেল কাঠামোতে বেতনের অনুপাত (যেমন ১:৪, ১:৬, ১:১০ ইত্যাদি) নির্ধারণের দাবিও জানানো হয়েছে।

মানবিকতার আলোকে বিবেচনার আবেদন

আবেদনকারীর বিনত অনুরোধ পে কমিশনের কাছে পৌঁছে দিতে গিয়ে বলা যায়, শুধুমাত্র বাজারের দাম ও পুরনো স্কেলের অনুপাত নয়, বরং “বিবেককে শানিত করে,” “মানবিকতাকে জাগ্রত করে,” এবং “বিবেচনাবোধকে তীক্ষ্ণ করে” সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করা হোক। ঢাকা শহরে একজন সরকারি কর্মচারী যাতে মাথা উঁচু করে চলতে পারেন এবং তাঁর সন্তানকে সুশিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য দিতে পারেন, সেই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

নবম পে স্কেল কেবল একটি আর্থিক কাঠামো নয়, এটি লাখ লাখ সরকারি কর্মচারীর জীবনযাত্রার মান এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। এই স্কেলে যেন মানুষ তার মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত হয়, সেই প্রত্যাশা সবার।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত নবম জাতীয় বেতন স্কেল (পে স্কেল) চূড়ান্তকরণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বিভিন্ন সূত্র এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য অনুযায়ী, পে কমিশন আগামী ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যেই সরকারের কাছে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিতে পারে। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে, নতুন পে স্কেল ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই কার্যকর হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার মেয়াদেই এই গেজেট প্রকাশ করতে আগ্রহী।


চূড়ান্ত সুপারিশ ও কার্যকরের সম্ভাব্য সময়রেখা

  • চূড়ান্ত সুপারিশ জমা: ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে।
  • কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা: ২০২৬ সালের জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল থেকে।

অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন পে স্কেল ২০২৬ সালের শুরু থেকেই কার্যকর হতে পারে এবং এ জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। বর্তমান সরকার পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা না করে তাদের মেয়াদেই গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে।

সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতন নিয়ে প্রস্তাবনা

কমিশনের কাছে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠন এবং সংস্থার পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব জমা পড়েছে, যার মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বৃদ্ধি করা।

প্রস্তাবকারী পক্ষ সর্বনিম্ন বেতনের প্রস্তাব সর্বোচ্চ বেতনের প্রস্তাব অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব
বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন ৩৫,০০০ টাকা ১,৪০,০০০ – ১,৫০,০০০ টাকা টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল, গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে আনা, ১:৪/১:১০ অনুপাতে বেতন কাঠামো।
অর্থ বিভাগের কল্যাণ সমিতি ২৫,০০০ টাকা ১,৫০,০০০ টাকা বিদ্যমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১২টি বা ১৫টিতে আনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ (প্রভাষক পদের জন্য) ৮৭,০০০ টাকা ৩০০% মূল বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রভাষক নিয়োগ অষ্টম/সপ্তম গ্রেডে করার দাবি।
অন্যান্য দাবি ঈদ বোনাস দ্বিগুণ করা, ঝূঁকি ভাতা বাড়ানো।

বেতন বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি এবং আগের পে স্কেলের পর দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান বিবেচনায় নিয়ে নতুন বেতন কাঠামোতে মূল বেতন দ্বিগুণ (৯০% থেকে ৯৭%) পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করা হতে পারে।

পে স্কেলের মূল লক্ষ্য

কমিশন শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং একটি বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে গ্রেডভিত্তিক বৈষম্য দূর করা এবং গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে আনা (কেউ ১২টি, কেউ ১৫টি) অন্যতম প্রধান আলোচনা। কমিশনের কাজ হবে এমন একটি সুপারিশ চূড়ান্ত করা, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি না করে এবং সকল শ্রেণির মানুষ উপকৃত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *