সর্বশেষ প্রকাশিত

ভারতের পিয়নের বেতন প্রায় ৭০ হাজার টাকা 2025 । বৈষম্য কমাতে ন্যায্য ও বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেলে ১০০% পেনশন চাইলেন সরকারি কর্মচারীরা”

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো অর্থাৎ নবম পে-স্কেল প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে ভারতে অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ভার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো নিয়ে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের নবম পে-স্কেলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের যৌক্তিকতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়ানোর জোর দাবি উঠেছে।

ভারতে পিয়নের বেতন: নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের চেয়েও বেশি?

সম্প্রতি ভারতীয় অষ্টম বেতন কমিশন নিয়ে আলোচনা থেকে জানা গেছে, প্রাথমিক হিসেবে একজন পিয়নের ন্যূনতম মূল বেতন প্রায় ৩৪,৫৬০ রুপি পর্যন্ত হতে পারে (২.৫৭ থেকে ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর অনুযায়ী)। মহার্ঘ্য ভাতা (ডিএ) ও অন্যান্য ভাতা যোগ করলে একজন পিয়নের মোট মাসিক বেতন ৭০-৭৫ হাজার বাংলাদেশি টাকার সমতুল্য হতে পারে।

এই তথ্য সামনে আসার পর বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারী মহলে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, “আমাদের দেশে নবম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা, এমনকি অনেক বিসিএস ক্যাডারও শুরুতে এত টাকা মোট বেতন পান না। এটি আমাদের কর্মচারীদের জন্য একরকম স্বপ্নের মতো।”

নবম পে-স্কেল: বৈষম্য দূরীকরণ ও দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন মহল থেকে নবম পে-স্কেল দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে। বিশেষত, অন্তর্র্বতী সরকার ২০২৬ সালের জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল মাস থেকে এটি কার্যকর করার ইঙ্গিত দেওয়ায় এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। কর্মচারীরা আশঙ্কা করছেন, দলীয় সরকার ক্ষমতা অধিষ্ঠিত হলে এই পে-স্কেল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে পারে।

কর্মচারীদের মূল দাবিগুলো (চিকিৎসা, পেনশন ও গ্র্যাচুইটি):

নবম পে-স্কেলের খসড়া প্রণয়ন চলাকালে নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুবিধাগুলো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন কর্মচারীরা:

১. চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি: বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা মাসিক ১,৫০০ টাকা (এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ৫০০/১,০০০ টাকা) চিকিৎসা ভাতা পান। এই অপ্রতুল ভাতা বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ৫,০০০/- টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে।

২. পেনশন ও গ্র্যাচুইটি সংস্কার:

* পেনশন: বর্তমানে শেষ আহরিত বেতনের ৯০% পেনশন চালু আছে। এটি বৃদ্ধি করে ১০০% করার দাবি।

* গ্র্যাচুইটি বৃদ্ধি: বর্তমানে গ্র্যাচুইটির হার বাধ্যতামূলক সমর্পিত প্রতি ১ টাকার বিপরীতে ২৩০ গুণ। এটিকে বৃদ্ধি করে ৫০০ গুণ করার দাবি জানানো হয়েছে।

* গ্র্যাচুইটি কাটার নিয়ম বাতিল: বর্তমানে গ্র্যাচুইটির টাকা অর্ধেক কেটে রাখার যে বিধান রয়েছে (গ্র্যাচুইটি:: {(বেসিক×২৩০×৯০%)÷২}) তা চিরতরে বাতিল করে, ১০০% ঐচ্ছিক পেনশন সুবিধা পুনরায় চালু করার দাবি করা হয়েছে। নতুন নিয়মে গ্র্যাচুইটি নির্ধারণ করতে হবে: বেসিক×৫০০×১০০%। পেনশনের জন্য গ্র্যাচুইটির কোনো টাকা কেটে রাখা যাবে না বলেও দাবি জানিয়েছেন তারা।

৩. বেতনের অনুপাতিক হার: যদিও প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ বেতন বৃদ্ধির দাবি করেন, কিন্তু কর্মচারীদের একটি অংশ মনে করেন, উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তাদের মৌলিক বেতন যৌক্তিক অনুপাতে নির্ধারিত হওয়া উচিত। নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের ন্যূনতম মৌলিক বেতন ৩০,০০০ টাকার কম না হোক বলে এই অংশটি মত দিয়েছে।

শিক্ষাব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট একজন তরুণ নাগরিক হিসেবে এই আলোচনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি আশা করেছেন, নবম পে-স্কেল যেন সকল কর্মচারীর জন্য একটি ন্যায্য ও বৈষম্যহীন কাঠামো নিয়ে আসে, যা মূল্যস্ফীতির বাজারে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

সবমিলিয়ে, সরকারি কর্মচারীরা আশা করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনা করে ২০২৬ সালের শুরুতেই একটি সম্মানজনক ও কল্যাণকর নবম পে-স্কেল গেজেটের মাধ্যমে কার্যকর করবে।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের দিকে আপনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ভারতের ২০১৬ সালের বেতনের প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান মূল্যস্ফীতির সাপেক্ষে বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন (নবম) পে-স্কেলের সর্বনিম্ন মূল বেতন কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন নিচে তৈরি করা হলো।


**শিরোনাম: মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে পুরনো স্কেল বাতিল: ৩৫,০০০ টাকা ন্যূনতম বেসিক বেতন না হলে নবম পে-স্কেল হবে প্রহসন

ঢাকা: সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো (নবম পে-স্কেল) প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৬ সালের শুরুতেই এটি কার্যকর করার ইঙ্গিত দেওয়া হলেও, সর্বনিম্ন বেতনের অঙ্ক নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা ও বিতর্ক। কর্মচারীদের আশঙ্কা, যদি ২০তম গ্রেডে সর্বনিম্ন মূল বেতন (বেসিক পে) মাত্র ১৬,৫০০ টাকা (পুরনো বেসিকের দ্বিগুণ) নির্ধারণ করা হয়, তবে ২০১৬ সালে কার্যকর হওয়া ভারতীয় বেতন কাঠামোর সঙ্গে তুলনা করলে এই স্কেল হবে চরম বৈষম্যমূলক ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেমানান

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও কর্মচারীদের যৌথ দাবি—বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক বৈষম্য বিবেচনায় নবম পে-স্কেলে সর্বনিম্ন মূল বেতন ন্যূনতম ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা অপরিহার্য।

১. ২০১৬ সালের ভারতীয় বেতনের সঙ্গে চরম বৈসাদৃশ্য

২০১৬ সালে কার্যকর হওয়া ভারতের সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী, একজন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর সর্বনিম্ন মূল বেতন ছিল ১৮,০০০ রুপি। বর্তমান বিনিময় হারে (১ রুপি ≈ ১.৩৫ টাকা) ওই ১৮,০০০ রুপি প্রায় ২৪,৩০০ বাংলাদেশি টাকার সমান।

অন্যদিকে, নতুন পে-স্কেলে যদি ২০তম গ্রেডে সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৬,৫০০ টাকা (বর্তমান ৮,২৫০ টাকার দ্বিগুণ) করা হয়, তবে তা স্পষ্টতই ২০১৬ সালে কার্যকর হওয়া ভারতের সর্বনিম্ন বেতনের চেয়েও অনেক কম হবে।

সর্বশেষ ভারতীয় অষ্টম পে-কমিশনের সম্ভাব্য প্রস্তাবনা (ন্যূনতম বেসিক ৩৪,৫৬০ রুপি বা প্রায় ৪৬,৬৬০ টাকা) যদি বিবেচনা করা হয়, তবে বাংলাদেশের কর্মচারীদের জন্য ১৬,৫০০ টাকা বেসিক নির্ধারণ করা হবে একটি অগ্রহণযোগ্য ‘প্রহসন’

২. মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়: কেন ১৬,৫০০ টাকা বেমানান?

২০১৫ সালে যখন বাংলাদেশে অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির মূল যুক্তি ছিল মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করা। কিন্তু বর্তমানে (২০২৫ সালে) খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোর খরচ যে হারে বেড়েছে, তাতে:

বিষয় ২০১৫ সালের পে-স্কেলের বেসিক (৮,২৫০ টাকা) প্রস্তাবিত নতুন পে-স্কেলের বেসিক (১৬,৫০০ টাকা) প্রয়োজন অনুযায়ী ন্যূনতম বেসিক (৩৫,০০০ টাকা)
বাস্তব সক্ষমতা চরম অপ্রতুল আংশিক অপ্রতুল জীবনধারণের উপযোগী
মূল্যস্ফীতির চাপ সামঞ্জস্যহীন অনেক কম কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ
আবাসন ব্যয় ১,০০০ টাকা বাড়িভাতা দিয়ে অসম্ভব ৫% (নগণ্য) দিয়ে অসম্ভব মূল বেতনের ৩০% বাড়িভাতা প্রয়োজন

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত ১০ বছরে (২০১৫-২০২৫) গড় মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অনেক বেশি। কেবল পুরনো বেসিককে দ্বিগুণ (৮,২৫০ টাকা ২ গুন ১৬,৫০০ টাকা) করলেই কর্মচারীদের অর্থনৈতিক চাপ কমবে না। বৈষম্য দূর করতে হলে নতুন কাঠামোতে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বাস্তবতার নিরিখে নির্ধারণ করতে হবে।

৩. কর্মকর্তাদের বেতন ও বেতনের অনুপাতের ন্যায্যতা

সরকারি কর্মচারীদের দাবি, যদি ১ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন ১,০০,০০০ টাকা থেকে ১,৫৬,০০০ টাকা বা তার বেশি করার চিন্তা করা হয়, তবে সর্বনিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর মূল বেতন ১৬,৫০০ টাকা হতে পারে না।

  • যদি সর্বোচ্চ বেতন ১,৫৬,০০০ টাকা হয় এবং সর্বনিম্ন বেতন ১৬,৫০০ টাকা হয়, তবে বেতনের অনুপাত দাঁড়ায় প্রায় ৯.৪৫:১
  • যদি সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা করা হয়, তবে অনুপাত দাঁড়ায় প্রায় ৪.৪৫:১

এই অনুপাত আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন এবং নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কর্মচারীদের মতে, সরকারের উচিত শুধু সর্বোচ্চ গ্রেডের জন্য নয়, সর্বনিম্ন গ্রেডের জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর দিকেও মনোযোগ দেওয়া।

৪. দাবি ও প্রত্যাশা: ন্যূনতম ৩৫,০০০ টাকা

সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন জোরালোভাবে দাবি জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি এবং পার্শ্ববর্তী দেশের বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন মূল বেতন ন্যূনতম ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে, চিকিৎসা ভাতা ৫,০০০ টাকা, ১০০% গ্র্যাচুইটি এবং গ্র্যাচুইটির পরিমাণ ৫০০ গুণ করার দাবিও রয়েছে।

যদি এই দাবিগুলো পূরণ না করে শুধুমাত্র দ্বিগুণ বেতনের প্রস্তাব করা হয়, তবে নবম পে-স্কেল কর্মচারীদের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না, বরং বৈষম্য আরও বাড়াবে। তাই, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার দোহাই না দিয়ে মূল্যস্ফীতি, আঞ্চলিক সক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মানদণ্ড বিবেচনা করে একটি বাস্তবভিত্তিক ও ন্যায্য পে-স্কেল ঘোষণা করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *