সরকারি কর্মচারীদের ‘যুগান্তকারী’ দাবি ২০২৫ । সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা, গ্রেড সংখ্যা হ্রাস ও টাইমস্কেল পুনর্বহালের আহ্বান
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নে গঠিত ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’-এর কাছে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলো তাদের একগুচ্ছ ‘যুগান্তকারী’ ও সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করেছে। মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের মুখে এসব দাবিকে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন কর্মচারীরা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ করা, গ্রেডের সংখ্যা ২০টি থেকে কমিয়ে ১২টিতে আনা এবং তিনটি টাইমস্কেল পুনর্বহাল করা।-সরকারি কর্মচারীদের ‘যুগান্তকারী’ দাবি ২০২৫
জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫-কে ছয় মাসের মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে, এবং কমিশন ইতিমধ্যে কর্মচারীর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন ধরে ব্যয়ের হিসাব করার নির্দেশনা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, কর্মচারী সংগঠনগুলো বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও পরিবারের ব্যয় নির্বাহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের আর্থিক দাবিগুলো জোরেশোরে তুলে ধরেছে।
মূল আর্থিক দাবি: ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য ৩৫,০০০ টাকা মূল বেতন
সরকারি কর্মচারীদের মূল দাবি হলো, ছয় সদস্যের একটি পরিবারের এক মাসের ন্যূনতম খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক খরচ নির্বাহের জন্য সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা। বর্তমানে ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, যা বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে দাবি তাদের।
কর্মচারীরা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাতা বৃদ্ধিরও দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রস্তাবিত ভাতার হারগুলো হলো:
বেতন কাঠামোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন: ১:৪ অনুপাত ও ১২টি গ্রেড
আর্থিক দাবির পাশাপাশি বেতন কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। তাদের প্রধান দাবিগুলো হলো:
- বেতন অনুপাত পরিবর্তন: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের মধ্যে বেতনের অনুপাত বর্তমান ১০:১ (বা কমিশনের বিবেচনাধীন ৮:১ থেকে ১০:১) থেকে কমিয়ে ১:৪-এ নামিয়ে আনা। এই পরিবর্তন কার্যকর হলে সর্বনিম্ন গ্রেডের কর্মচারীর বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং বৈষম্য কমবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
- গ্রেড সংখ্যা হ্রাস: বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে ১২টি গ্রেডে সীমিত করা। গ্রেড সংখ্যা কমানোর ফলে পদোন্নতি ও বেতন নির্ধারণ প্রক্রিয়া আরও সরল হবে বলে মনে করছেন কর্মচারীরা।
- সমান বেতন পার্থক্য: প্রস্তাবিত ১২টি গ্রেডের মধ্যে সমান বা সামঞ্জস্যপূর্ণ পার্থক্য (Uniform Difference) বজায় রাখার দাবি জানানো হয়েছে, যাতে বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য হ্রাস পায়।
টাইমস্কেল পুনর্বহালের দাবি
এছাড়াও, দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারীদের একটি জোরালো দাবি হলো তিনটি টাইমস্কেল (Time Scale) পুনর্বহাল করা। কর্মচারীরা মনে করেন, পদোন্নতির সুযোগ সীমিত থাকায় অনেক কর্মচারী একই পদে দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করেন। এই পরিস্থিতিতে, টাইমস্কেল পুনর্বহাল করা হলে দীর্ঘকাল ধরে একই পদে কাজ করা কর্মচারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এবং তাদের মধ্যে হতাশা কমবে।
কমিশনের বর্তমান কার্যক্রম
সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে গঠিত পে কমিশন বর্তমানে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের কাছে সুপারিশগুলো জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশন ইতিমধ্যেই চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া, নাগরিক ও সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে মতামত জানতে একটি অনলাইন জরিপও শুরু করেছে।
তবে, কর্মচারীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ১:৪ অনুপাত, ১২টি গ্রেড এবং সুনির্দিষ্ট ভাতার দাবিগুলো সরকারের আর্থিক সক্ষমতা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় কমিশন কীভাবে মূল্যায়ন করে, এখন সেই দিকেই তাকিয়ে আছে দেশের প্রায় ১৫ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।
প্রস্তাবিত বেতন স্কেল (৯,৫৫০ টাকা সমান পার্থক্য)
এই কাঠামোর সুবিধা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. বৈষম্য হ্রাস: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ করায় কর্মচারীদের মধ্যে আয়ের বৈষম্য (Disparity) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, যা সামাজিক ন্যায় ও সমতার দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিবাচক।
২. সমান গ্রেড পার্থক্য: প্রতিটি গ্রেডের মধ্যে প্রায় ৯,৫৫০ টাকা সমান পার্থক্য রাখার ফলে নিম্ন গ্রেড থেকে উচ্চ গ্রেডে যাওয়ার আর্থিক সুবিধা সুস্পষ্ট হবে।
৩. গ্রেড বিন্যাস সরলীকরণ: ২০টি গ্রেড থেকে কমিয়ে মাত্র ১২টি গ্রেড করায় পদোন্নতি, বেতন নির্ধারণ ও হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ ও সরল হবে। এতে কর্মচারীদের পদোন্নতিজনিত জটিলতা কমবে।
৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা হওয়ায় নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবেন।