Friday, October 10, 2025
Latest:
সর্বশেষ প্রকাশিত

বৈষম্যহীন পে-স্কেলের দাবিতে সরব কর্মচারীরা, পে-কমিশনের প্রতি বিস্তারিত প্রস্তাব পেশ

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। সম্প্রতি, পে-কমিশন গঠনের পর কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন ও ফোরাম তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রস্তাবনাগুলো কমিশনের কাছে পেশ করছে। নিম্ন আয়ের কর্মচারীরা বলছেন, সম্মান নিয়ে বাঁচার জন্য একটি ন্যায্য ও বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো এখন সময়ের দাবি।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, পে-কমিশনের কাছে যে প্রস্তাবনাগুলো জমা পড়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দাবি নিচে তুলে ধরা হলো: বেতন ও গ্রেড সম্পর্কিত দাবি:
বেতন গ্রেড: বর্তমানের ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২টি গ্রেডে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গ্রেড সমন্বয়: প্রস্তাবিত গ্রেড অনুযায়ী, ১৭-২০তম গ্রেডকে চতুর্থ শ্রেণি, ১৪-১৬তম গ্রেডকে তৃতীয় শ্রেণি, ১০-১৩তম গ্রেডকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং নবম ও তার উপরের গ্রেডকে প্রথম শ্রেণি হিসেবে শ্রেণিকরণের দাবি জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে গ্রেডের মিশ্রণ কমানো সম্ভব হবে।
বেতন অনুপাত: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১:৪ নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়েছে। এই অনুপাত অনুযায়ী, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ৪,০০,০০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সমপরিমাণ বেতন ব্যবধান: প্রত্যেকটি গ্রেডে বেতনের পার্থক্য যেন সমান পরিমাণে থাকে, সে বিষয়েও অনুরোধ করা হয়েছে।
কার্যকর তারিখ: কর্মচারীরা যেহেতু দীর্ঘ ১১ বছর ধরে কোনো নতুন পে-স্কেল পাননি, তাই জুলাই, ২০২৫ থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করার দাবি জানানো হয়েছে।
ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা:
বাড়িভাড়া ভাতা: ছয় সদস্যের একটি পরিবারের জন্য নূন্যতম তিনটি বেডরুমের উপযোগী বাড়িভাড়ার ভিত্তিতে বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত হারে রাজধানীর জন্য ৭৫%, সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৭০% এবং জেলা পর্যায়ের জন্য ৬৫% বাড়িভাড়া নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে।
অন্যান্য ভাতা: চিকিৎসা ভাতা (১০,০০০ টাকা), শিক্ষা সহায়তা ভাতা (এক সন্তানের জন্য ৩,০০০ টাকা ও দুই সন্তানের জন্য ৬,০০০ টাকা), যাতায়াত ভাতা (৩,০০০ টাকা) এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট বিলের জন্য মাসিক ১,০০০ টাকা ভাতার দাবি করা হয়েছে।
লাঞ্চ ও ইফতারি ভাতা: টিফিন ভাতার পরিবর্তে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো “লাঞ্চ ভাতা” হিসেবে প্রতিদিন ২৫০ টাকা এবং রমজান মাসে “ইফতারি ভাতা” হিসেবে ৬,০০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বোনাস: বৈশাখী ভাতা মূল বেতনের নূন্যতম ৫০% করার অনুরোধ করা হয়েছে।
পেনশন ও রেশন ব্যবস্থা: স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো সকল কর্মচারীর জন্য রেশন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়েছে।
ঋণ সুবিধা: সহজ শর্তে ও নামমাত্র সুদে বা সর্বোচ্চ ২% সুদে ফ্ল্যাট বা বাড়ি নির্মাণে নূন্যতম ৫০ লাখ থেকে ৯০ লাখ টাকা এবং গাড়ি কেনায় ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে।
টাইমস্কেল ও সার্ভিস বেনিফিট:
টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড: প্রস্তাবনায় ব্লকপোস্ট বাতিল করে সার্ভিস বেনিফিট, টাইমস্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড পুনরায় চালু করার অনুরোধ করা হয়েছে।
নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা বলছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য একটি সম্মানজনক বেতন কাঠামো অপরিহার্য। তারা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, অর্থ সচিব এবং পে-কমিশনের সকল সদস্যের প্রতি দ্রুত পে-স্কেল ঘোষণা করে কর্মচারীদের দুর্দশা লাঘবে এগিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *