সর্বশেষ প্রকাশিত

ক্ষুধা ও হতাশায় সরকারি কর্মচারীরা ২০২৫ । ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে ১৭ তারিখের কর্মসূচি?

বৈষম্য দূর করে সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা বেতন, নবম পে স্কেল ও ডিসেম্বরে গেজেটের দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের ১৭ তারিখের কর্মসূচি ঘোষণা: স্লোগানে মুখর রাজপথের প্রস্তুতি

দীর্ঘদিনের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানো এবং ন্যায্য নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি কর্মচারীরা আগামী ১৭ তারিখে বৃহত্তর কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা বেতন এবং বৈষম্যহীন নতুন পে স্কেলের দ্রুত গেজেট প্রকাশ। এই দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান নিয়ে তারা রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।

কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে বর্তমান বেতন কাঠামোয় জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই তারা ১:৪ বেতন অনুপাতের ভিত্তিতে একটি ন্যায্য পে স্কেল কার্যকর করার জোর দাবি জানাচ্ছেন।

কর্মসূচির মূল দাবি ও স্লোগান:

কর্মচারীদের কর্মসূচির স্লোগানগুলোতে তাদের ক্ষোভ ও দাবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে:

  • বেতন ও বৈষম্য:
    • “সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার – দিতে হবে দিতে হবে”
    • “আমার সোনার বাংলায় – বৈষম্যর ঠাই নাই”
    • “১:৪ অনুপাত – দিতে হবে দিয়ে দাও”
    • “গ্রেড সংখ্যা ১২ টা- করতে হবে করতে হবে”
    • “৯ম পে স্কেল ৯ম পে স্কেল – দিতে হবে দিতে হবে”
    • “পে স্কেলের গেজেট দে- বৈষম্যর কবর দে।”
    • “১০ ববছরের যন্ত্রণা – সইতে যে আর পারিনা”
  • প্রজ্ঞাপন ও গেজেট দাবি: কর্মচারীরা দ্রুত নবম পে স্কেলের প্রজ্ঞাপন ও গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। সামনে নির্বাচন থাকায় তারা এই কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
    • “সামনে আসছে নির্বাচন – আগে চাই প্রজ্ঞাপন”
    • “ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন – দিতে হবে দিতে হবে”
    • “ডিসেম্বরে গেজেট দিন- বৈষম্যর কবর দিন”
  • ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা: সামান্য টিফিন ভাতা এবং বাতিল হওয়া সুযোগ-সুবিধা নিয়েও কর্মচারীরা সরব।
    • “৬ টাকা টিফিন ভাতা – মানি না মানবোনা”
    • “ক্ষুধার জ্বালা কই লুকাই- ৬ টাকায় টিফিন নাই।”
    • “টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড – দিতে হবে দিতে হবে।”
  • দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ: জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে তারা দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণের দাবিও তুলে ধরেছেন।
    • “দ্রব্য মূল্যর নিয়ন্ত্রণ – করতে হবে করতে হবে”

কর্মচারী নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি দ্রুত তাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হয় এবং ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা না হয়, তাহলে তারা বৃহত্তর ও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীরা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানালেন।

সরকারি কর্মচারীদের প্রার্থিত বেতন কাঠামো বলতে তারা যে নতুন বেতন স্কেল এবং সুযোগ-সুবিধাগুলো দাবি করছেন, সেগুলোর একটি চিত্র তুলে ধরা যায়। তাদের উত্থাপিত স্লোগান এবং দাবির ভিত্তিতে এই প্রার্থিত কাঠামোটি নিম্নরূপ হতে পারে:

সরকারি কর্মচারীদের প্রার্থিত বেতন কাঠামো ও অন্যান্য দাবি:

১. সর্বনিম্ন বেতন: * প্রাথমিক দাবি: সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা (পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা)। * যৌক্তিকতা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে সঙ্গতি রেখে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত বেতন নিশ্চিত করা।

২. বেতন অনুপাত: * দাবি: ১:৪ অনুপাত। অর্থাৎ, সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের ৪ গুণ হবে সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন। * লক্ষ্য: বেতন বৈষম্য কমানো এবং গ্রেডগুলোর মধ্যে একটি যৌক্তিক ব্যবধান তৈরি করা।

৩. নবম পে স্কেল: * দাবি: একটি নতুন, বৈষম্যহীন এবং যুগোপযোগী নবম পে স্কেল দ্রুত বাস্তবায়ন। * লক্ষ্য: ১০ বছর ধরে চলমান বেতন কাঠামো জনিত অসন্তোষ দূর করা এবং সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন স্কেল প্রবর্তন।

৪. গ্রেড সংখ্যা: * দাবি: গ্রেড সংখ্যা ১২টিতে সীমাবদ্ধ রাখা। (বর্তমানে ২০টি গ্রেড রয়েছে)। * লক্ষ্য: গ্রেড বিন্যাসকে সরল করা এবং বিভিন্ন গ্রেডের মধ্যে পদোন্নতি ও সুযোগের তারতম্য কমানো।

৫. টিফিন ভাতা: * দাবি: বর্তমান ৬ টাকা টিফিন ভাতার পরিবর্তে যুক্তিসঙ্গত ও পর্যাপ্ত টিফিন ভাতা প্রদান। * যৌক্তিকতা: ৬ টাকা টিফিন ভাতার চরম অপ্রতুলতা তুলে ধরা এবং প্রকৃত ব্যয় নির্বাহের জন্য সহায়ক ভাতার প্রয়োজন।

৬. টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড: * দাবি: পূর্বের মতো টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনরায় চালু করা। * লক্ষ্য: নির্দিষ্ট সময় অন্তর পদোন্নতি না হলেও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং কর্মজীবনে স্থবিরতা দূর করা।

৭. গেজেট ও প্রজ্ঞাপন: * দাবি: দ্রুত নবম পে স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি এবং ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশ। * লক্ষ্য: নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা এবং দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করা।

৮. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ: * দাবি: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা। * লক্ষ্য: শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।

সংক্ষেপে, সরকারি কর্মচারীরা একটি এমন বেতন কাঠামো চাচ্ছেন যা তাদের বর্তমান আর্থিক সংকট নিরসন করবে, বেতন বৈষম্য দূর করবে এবং কর্মজীবনে একটি স্থিতিশীল ও সম্মানজনক আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *