🏛️ পে-স্কেল ও সচিবালয় ভাতার দাবিতে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর ‘অবরুদ্ধ’, বিক্ষোভে শত শত নন-ক্যাডার কর্মচারী
দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন পে-স্কেলসহ সচিবালয় ভাতা ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ বুধবার দুপুরে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ আন্দোলনকারী অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের দপ্তরে অবস্থান নেন এবং কার্যত তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
দাবি: এক সপ্তাহের মধ্যে গেজেট প্রকাশের আল্টিমেটাম
সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন পে-স্কেল ও সচিবালয় ভাতার গেজেট প্রকাশের জোর দাবি জানান। আন্দোলনকারীদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
সচিবালয়ে কর্মরত সবার জন্য ২০ শতাংশ সচিবালয় ভাতা প্রদান।
-
দ্রুত নতুন পে-স্কেল ঘোষণা ও বাস্তবায়ন।
-
মহার্ঘ্য ভাতা চালুর ঘোষণা কার্যকর করা।
আন্দোলনরত একজন সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) জানান, “উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও সচিবরা রাতে যতক্ষণ অফিসে থাকেন, আমাদেরও ততক্ষণ থাকতে হয়। অথচ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পে-স্কেলের বাইরে নানা ধরনের ভাতা পেলেও আমরা তা থেকে বঞ্চিত। সে কারণেই ২০ শতাংশ সচিবালয় ভাতার দাবিতে এই আন্দোলন।”
অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয় ঘিরে স্লোগান
দুপুর আড়াইটার দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আগত নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় তলায় অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে জড়ো হন। তারা হ্যান্ড মাইকে নিজেদের দাবির সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এই অবস্থানের কারণে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার দপ্তরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য
বিক্ষোভের মুখে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি পে-স্কেল নিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, পে-স্কেল ঘোষণা করা সহজ কাজ নয় এবং কর্মচারীদের দেওয়া আল্টিমেটামের মধ্যে এত কম সময়ে তা ঘোষণা করা সম্ভব হবে না। তবে তিনি আশ্বাস দেন যে এ বিষয়ে কাজ চলছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, মহার্ঘ্য ভাতা চালুর ঘোষণা কার্যকর না হওয়া এবং নতুন পে-কমিশন গঠন হলেও বর্তমান সরকার তা বাস্তবায়ন করবে না বলে অর্থ উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
পুলিশের তৎপরতা ও বর্তমান পরিস্থিতি
সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার জহিরুল ইসলাম জানান, “তারা ভাতার দাবিতে উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন এবং সেখানে অবস্থান নিয়ে আছেন। উপদেষ্টা মহোদয় তাদের কয়েকজন নেতাকে ডেকেছেন, তারা কথা বলছেন।”
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বিকেল ৪টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন এবং ভাতার গেজেট জারি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অর্থ উপদেষ্টা কি বলছেন?
আন্দোলন চলাকালীন এবং সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্মচারীদের দাবি ও পে-স্কেল প্রসঙ্গে যে বক্তব্যগুলো দিয়েছেন, তা নিচে তুলে ধরা হলো:
ঘটনাস্থলে দেওয়া বক্তব্য (পে-স্কেল প্রসঙ্গে):
আন্দোলনকারীদের অবস্থানের মুখে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন যে, নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা সহজ কাজ নয়, কারণ এর সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। কর্মচারীরা যে সময়সীমা (আল্টিমেটাম) দিয়েছেন, তার মধ্যে এত কম সময়ে পে-স্কেল ঘোষণা করা সম্ভব হবে না। তবে তিনি এ বিষয়ে সরকার কাজ করছে বলে আশ্বাস দেন।
দাবি বিবেচনার আশ্বাস:
তিনি আন্দোলনকারীদের কয়েকজন নেতাকে ডেকে তাদের দাবিগুলো (যেমন ২০ শতাংশ সচিবালয় ভাতা) বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্দোলনের পেছনের কারণ (পূর্বের বক্তব্য):
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভের অন্যতম কারণ ছিল অর্থ উপদেষ্টার পূর্বের একটি বক্তব্য। সেখানে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, নতুন পে-কমিশন গঠন করা হলেও এর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন বা সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নেবে না, বরং সেটি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য রাখা হবে। এই বক্তব্যে কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র হতাশা তৈরি হয়।
সংক্ষেপে, তিনি দ্রুত পে-স্কেল ঘোষণার দাবিটি সময়ের অভাবে পূরণ করা সম্ভব নয় বলে জানালেও কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

