পে কমিশনের সুপারিশ নিয়ে কর্মচারীদের চরম হুঁশিয়ারি: ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন না এলে বৃহত্তর কর্মসূচী!
নতুন পে স্কেলের সুপারিশ আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবির জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশের সারসংক্ষেপ হলেও জমা দিতে হবে, অন্যথায় কর্মচারীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাদিউল কবির এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কর্মচারীরা দীর্ঘ দিন ধরে নতুন পে স্কেলের জন্য অপেক্ষা করছেন এবং পে কমিশন চাইলেই এই সময়ের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে সক্ষম।
⚠️ আন্দোলনের প্রস্তুতি ও আল্টিমেটাম
কর্মচারী এই নেতা জোর দিয়ে বলেন, কর্মচারীরা এখন ঐক্যবদ্ধ এবং যেকোনো সময় যেকোনো কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি কমিশনকে সময় বেঁধে দিয়ে বলেন,
“আমরা কমিশনকে সময় দিচ্ছি, অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে এমন কর্মসূচী দেওয়া হবে যে কমিশন তখন এক বছরের কাজ এক সপ্তাহে করতে বাধ্য হবে।
৫ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর ঘোষণা
বাদিউল কবির আরও জানান, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে আগামী ৫ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এই আল্টিমেটাম সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ কর্মচারীরা তাদের দাবি আদায়ে কোনো ধরনের আপস করতে রাজি নন।
সরকার কেন পে স্কেল দিতে বিলম্ব করছে?
সরকার কেন নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে, তার পেছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কারণ রয়েছে বলে জানা যায়। প্রধানত, এই বিলম্বের কারণগুলো হলো:
১. আর্থিক সক্ষমতা ও রাজস্ব ঘাটতি
-
সীমিত আর্থিক সক্ষমতা: অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বর্তমানে সীমিত। নতুন পে স্কেল কার্যকর হলে সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে।
-
রাজস্ব আহরণে স্থবিরতা: দেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ায় এবং প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় রাজস্ব আহরণও কমে গেছে। এই অবস্থায় বেতন ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সরকারের জন্য একটি বিশাল আর্থিক চ্যালেঞ্জ।
-
ব্যয় ও ঋণের চাপ: বর্তমান সরকারের ব্যয় এবং ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। এই চাপ থাকায় নতুন করে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ সংস্থান করা কঠিন।
২. ️ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
-
অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরুতেই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের মতো বড় আর্থিক সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থের জোগান এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাকে দেখানো হয়েছে।
-
পে কমিশনের জটিল প্রক্রিয়া: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, পে কমিশনের কাজ অত্যন্ত জটিল এবং এখানে বহু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া রয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করলেও এই প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে।
-
সময়োপযোগী বেতন কাঠামো প্রণয়ন: কমিশন শুধু বেতন নয়, ভাতা, সুবিধা এবং সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বেতন কাঠামোর সমন্বয়কেও গুরুত্ব দিচ্ছে, যাতে বেতন বৈষম্য দূর হয় এবং কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়। এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ।
৩. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
-
উচ্চ মূল্যস্ফীতি: দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নতুন করে বেতন বৃদ্ধি করা হলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সংক্ষেপে, সরকারের তরফ থেকে এই বিলম্বের মূল কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা, রাজস্বের ঘাটতি, ঋণের চাপ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তকে দায়ী করা হচ্ছে।

