সর্বশেষ প্রকাশিত

১০ বছর পর নতুন পে-স্কেলের দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের জোরালো কণ্ঠস্বর: সর্বনিম্ন বেসিক ৩৫ হাজার টাকাসহ ৭ দফা দাবি

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে কমিশন গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করেছে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে কর্মচারীদের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে আশা জেগেছে। তবে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং ১০ বছর ধরে নতুন পে-স্কেল না পাওয়ায় কর্মচারীরা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে চরম সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন বলে দাবি করছেন।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম পে-স্কেল দেওয়া হয়েছিল, যা প্রায় এক দশক আগে। সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন পে-স্কেল ঘোষণার নিয়ম থাকলেও তা বাতিল হওয়ায়, বর্তমানে চরম মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে সরকারি কর্মচারীদের, বিশেষ করে নিম্ন গ্রেডের কর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন ৯ম পে-স্কেল দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে। তারা বর্তমান বাজার ও একটি ছয় সদস্যের পরিবারের সামগ্রিক বিশ্লেষণ করে পে-কমিশনের কাছে তাদের সুনির্দিষ্ট ৭ দফা দাবি পেশ করেছে। তাদের প্রত্যাশা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই, অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে এই পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক।


কর্মচারীদের ৭ দফা দাবি

পে-কমিশনের কাছে সরকারি কর্মচারীদের উত্থাপিত মূল ৭টি দাবি নিচে তুলে ধরা হলো:

১। সর্বনিম্ন বেসিক ৩৫ হাজার টাকা: ১০ বছর ধরে পে-স্কেল না হওয়ায় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সর্বনিম্ন বেসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে।

২। রেশন সুবিধা: পরিবারের ৬ জন সদস্যের জন্য রেশন সুবিধা চালু করার দাবি করা হয়েছে।

৩। চিকিৎসা ভাতার বৃদ্ধি ও চিকিৎসার শতভাগ খরচ: বর্তমান চিকিৎসা ভাতা অপ্রতুল হওয়ায় তা বৃদ্ধি করার অথবা চিকিৎসার সকল খরচ সরকারকে বহন করার দাবি জানানো হয়েছে।

৪। শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি: সন্তানের শিক্ষা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষা ভাতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে।

৫। মানসম্মত নাস্তার ভাতা: বর্তমান টিফিন ভাতা (নোনতা বিস্কুট) বাদ দিয়ে কর্মচারীদের জন্য মানসম্মত নাস্তার ভাতা চালু করার দাবি।

৬। বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১০%: মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১০% করার দাবি জানানো হয়েছে।

৭। শ্রান্তিবিনোদন ভাতা: কর্মচারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে দুই বছর পর পর শ্রান্তিবিনোদন ভাতা প্রদানের দাবি করা হয়েছে।


পে-কমিশন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা

নতুন পে-কমিশন গঠনের ফলে সরকারি কর্মচারীরা একটি নতুন বেতন কাঠামোর আশা দেখছেন। এই কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে, অর্থাৎ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতি এবং বর্তমান বেতন কাঠামোতে বিদ্যমান বৈষম্যগুলো দূর করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী, নতুন পে-স্কেল ঘোষণার বিষয়টি দীর্ঘসূত্রিতা না করে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি এখন সবচেয়ে জরুরি। তাদের ধারণা, দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি হলে তা উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে তাদের জীবনযাত্রায় কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেবে। পে-কমিশন কর্মচারীদের দাবিগুলো কতটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা, সেদিকেই এখন সবার নজর।


সরকারি কর্মচারীদের এই দাবিগুলো বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে যৌক্তিক বলে অনেকে মনে করছেন। নতুন পে-স্কেল ঘোষণার মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী উপকৃত হবেন এবং এটি দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *