সর্বশেষ প্রকাশিত

সচিবালয়ের বাইরে ‘বৈষম্য’ সৃষ্টি ২০২৫ । পদবি পরিবর্তন প্রজ্ঞাপন কেন শুধু সচিবালয়ে? ক্ষুব্ধ ফিল্ড পর্যায়ের কর্মচারীরা?

নিম্নগ্রেডের আর্থিক ও পদোন্নতিজনিত ক্ষতি, প্রশ্নবিদ্ধ সরকারি নীতিনির্ধারণ-সরকারি কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনের একটি প্রজ্ঞাপন কেবল সচিবালয় বা সরকারের কেন্দ্রীয় দফতরে কার্যকর করার ফলে সারা দেশের ফিল্ড (মাঠ) পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত পরিকল্পিতভাবেই মাঠ প্রশাসনের নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা ও পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।

সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে সচিবালয়ের বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তন করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রধান সহকারী, শাখা সহকারী, উচ্চমান সহকারী ও বাজেট পরীক্ষক পদবি পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (Administrative Officer – A.O.) এবং সাটঁলিপিকার পদবি পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (Personal Officer – P.O.)। প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করা হয় যে, পদবি পরিবর্তন হলেও বর্তমান পদের দায়িত্ব, সুবিধা, বেতনস্কেল, কর্মপরিধি ও পদমর্যাদা অপরিবর্তিত থাকবে।

তবে, এই প্রজ্ঞাপনের প্রধান বিতর্কিত দিক হলো এর কার্যকারিতা শুধু সচিবালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। সারা দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং অন্যান্য দফতরগুলোতে একই ধরনের কাজ করা সত্ত্বেও ফিল্ড পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য এই সুবিধা কার্যকর করা হয়নি।

ক্ষতির মুখে ফিল্ড পর্যায়ের কর্মচারীরা:

মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের দাবি, পদবি পরিবর্তন না হওয়ায় তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন:

১. আর্থিক ক্ষতি: পদবি পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন পদগুলো (A.O. ও P.O.) ভবিষ্যতে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পেলে, সমমানের কাজ করা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এতে দীর্ঘমেয়াদে একটি বড় অঙ্কের আর্থিক বৈষম্য তৈরি হবে।

২. পদোন্নতিজনিত ক্ষতি: সচিবালয়ের কর্মচারীরা নতুন পদবিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে মর্যাদা ও সুবিধা পাবেন, ফিল্ড কর্মচারীরা একই পদে থেকে পদোন্নতি আটকে থাকার বা নিম্নমর্যাদায় থাকার ঝুঁকিতে পড়বেন।

৩. মানসিক বৈষম্য: একই সরকার ব্যবস্থার অধীনে একই ধরনের কাজ করে শুধুমাত্র কর্মস্থল ভিন্ন হওয়ায় দুই ধরনের মর্যাদা তৈরি হওয়াকে তারা ‘পরিকল্পিত বৈষম্য’ হিসেবে দেখছেন। তাদের প্রশ্ন, যদি বেতনস্কেল ও দায়িত্ব অপরিবর্তিতই থাকে, তাহলে এই সুবিধা সারা দেশে কার্যকর করতে বাধা কোথায়?

এ বিষয়ে একাধিক কর্মচারী সংগঠনের নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ফোরামে সচিবালয়কেন্দ্রিক কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্ব ও প্রভাব বেশি থাকে। ফলে, নিজেদের স্বার্থে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন যা ফিল্ড পর্যায়ের লাখ লাখ কর্মচারীকে বঞ্চিত করে।”

দ্রুত এই বৈষম্য নিরসন করে প্রজ্ঞাপনটি সারা দেশের সরকারি অফিসগুলোতে, বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে, অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মচারীরা। অন্যথায়, বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *