Pension । পেনশন তথ্য দেখুন

Pension Facilities Increase 2025 । সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল ও ভাতা বৃদ্ধির দাবি

সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন আসন্ন নবম পে-স্কেল দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে এই পে-স্কেল কার্যকর করা না হলে ভবিষ্যতে দলীয় সরকারের অধীনে নতুন কোনো পে-স্কেল প্রণয়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

চাকরিজীবীরা বলছেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে নতুন বেতন কাঠামো চালু করা আবশ্যক।

পে-স্কেল কার্যকরের পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি: বর্তমান চিকিৎসা ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে। চাকরিজীবীরা বলছেন, বর্তমান চিকিৎসা ভাতা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
  • পেনশন ও গ্র্যাচুইটি: পেনশন ও গ্র্যাচুইটির পরিমাণ ৯০% থেকে বাড়িয়ে ১০০% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে, গ্র্যাচুইটি গণনার হার ২৩০ গুণ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ গুণ করার দাবি উঠেছে।
  • গ্র্যাচুইটির টাকা কর্তন বাতিল: বর্তমানে প্রচলিত গ্র্যাচুইটির টাকা অর্ধেক কেটে রাখার বিধানটি বাতিল করে এটিকে সম্পূর্ণরূপে ঐচ্ছিক সুবিধা হিসেবে পুনর্বহাল করার দাবি জানানো হয়েছে।
  • নতুন গ্র্যাচুইটি হিসাব পদ্ধতি: বিদ্যমান গ্র্যাচুইটি হিসাবের পদ্ধতি (বেসিক × ২৩০ × ৯০%) ÷ ২ বাতিল করে নতুন একটি পদ্ধতি চালুর কথা বলা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি হলো: বেসিক × ৫০০ × ১০০%

দাবিতে আরও বলা হয়, পেনশনের জন্য গ্র্যাচুইটির কোনো অংশ কেটে রাখা যাবে না। বরং ১০০% ঐচ্ছিক পেনশন সুবিধা আবার চালু করতে হবে, যাতে একজন চাকরিজীবী তার প্রয়োজন অনুযায়ী পেনশন বা গ্র্যাচুইটি বেছে নিতে পারেন।

বিভিন্ন সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম ও সংগঠন আশা প্রকাশ করেছে, সরকার তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

পেনশন সুবিধা কেন বৃদ্ধির দাবী উঠছে?

চাকরিজীবীরা বিভিন্ন কারণে পেনশন সুবিধা বৃদ্ধির দাবি তুলছেন। এই দাবির মূল কারণগুলো হলো:

১. জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি

বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির কারণে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। পেনশন সুবিধা অপর্যাপ্ত হওয়ায় তাদের দৈনন্দিন খরচ, যেমন—খাদ্য, চিকিৎসা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে সমস্যা হচ্ছে। পেনশন বৃদ্ধি করা হলে তারা এই অর্থনৈতিক চাপ কিছুটা হলেও সামলাতে পারবেন।

২. চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি

বয়স বাড়ার সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। বর্তমান চিকিৎসা ভাতার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বিশেষ করে গুরুতর বা দীর্ঘমেয়াদী রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ মেটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। পেনশন ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি করা হলে অবসরপ্রাপ্তরা উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন এবং স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।


৩. পেনশনের অনুপাতিক হার বৃদ্ধি

চাকরিজীবীরা বর্তমানে ৯০% পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন, যা তারা ১০০%-এ উন্নীত করার দাবি করছেন। এর ফলে পেনশনের পরিমাণ বাড়বে এবং তাদের অবসরের পর জীবনধারণের জন্য আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আসবে।


৪. গ্র্যাচুইটি ও পেনশন হিসাবের নতুন প্রস্তাব

বর্তমানে গ্র্যাচুইটির হিসাব হয় (বেসিক × ২৩০ × ৯০%) ÷ ২ এই নিয়মে। চাকরিজীবীরা এই হিসাব বাতিল করে বেসিক × ৫০০ × ১০০% এই নতুন পদ্ধতি চালু করার দাবি জানাচ্ছেন। এর ফলে অবসরের সময় এককালীন প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়াও, তারা গ্র্যাচুইটির টাকা অর্ধেক কেটে রাখার নিয়ম বাতিল করে ঐচ্ছিক সুবিধা পুনর্বহালের দাবিও করছেন, যাতে তারা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী পুরো টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এই পরিবর্তনগুলো তাদের আর্থিক নিরাপত্তা জোরদার করবে।


৫. সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন

বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী তাদের সন্তানদের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে চান না। পর্যাপ্ত পেনশন সুবিধা থাকলে তারা আত্মনির্ভরশীল জীবনযাপন করতে পারবেন এবং সমাজে নিজেদের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখতে পারবেন। এই কারণগুলোর সম্মিলিত প্রভাবে পেনশন সুবিধা বৃদ্ধি একটি যৌক্তিক এবং প্রয়োজনীয় দাবি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *