জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড পুনর্বিন্যাস করে ১৪টি করার জোর দাবি
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের কাজ যখন পুরোদমে চলছে, ঠিক তখনই বিদ্যমান বেতন স্কেলের কাঠামো পরিবর্তন করে গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১৪টি করার জোরালো দাবি উঠেছে। একাধিক সরকারি কর্মচারীর পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, এতে বেতন কাঠামোর জটিলতা কমবে এবং কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য বহুলাংশে দূর হবে।
কর্মচারীদের এই প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেলের কিছু গ্রেডকে মার্জ (একত্রিত) করে মোট গ্রেডের সংখ্যা ১৪টিতে নামিয়ে আনা হবে। প্রস্তাবিত কাঠামোর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- গ্রেড ১১: এটি আলাদা থাকবে।
- গ্রেড ১২, ১৩ ও ১৪: এই তিনটি গ্রেডকে একত্রিত করে একটি একক গ্রেডে পরিণত করা হবে।
- গ্রেড ১৫ ও ১৬: এই দুটি গ্রেডও একত্রিত হয়ে একটি গ্রেড হবে।
- গ্রেড ১৭: এটি আলাদা থাকবে।
- গ্রেড ১৮ ও ১৯: এই দুটি গ্রেডকে মার্জ করে একটি গ্রেড করা হবে।
- গ্রেড ২০: এটি আলাদা থাকবে।
এই পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে বর্তমানে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে মোট গ্রেডের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১৪টিতে।
প্রস্তাবকারীরা মনে করছেন, বর্তমানে কিছু গ্রেডের মধ্যে বেতনের ব্যবধান খুবই সামান্য, যা প্রায়শই অসন্তোষ তৈরি করে। গ্রেড মার্জ করে সংখ্যা কমানো হলে এই অসংগতি দূর হবে এবং কাঠামোটি আরও যৌক্তিক ও সহজ হবে। তাদের বক্তব্য, “গ্রেড সর্বমোট ১৪টা হলে কারো আপত্তি থাকবে না।”
জাতীয় বেতন কমিশন বর্তমানে সরকারি কর্মচারী, বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে নতুন বেতন কাঠামো সম্পর্কে উন্মুক্ত মতামত গ্রহণ করছে। কমিশনও বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে পুনর্বিন্যাস করে সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এই সুনির্দিষ্ট ১৪টি গ্রেডের প্রস্তাব নিঃসন্দেহে কমিশনের বিবেচ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হলে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কিছুটা হলেও কমতে পারে এবং বেতন কাঠামোতে একটি সুষম অনুপাত বজায় রাখা সম্ভব হবে। এখন দেখার বিষয়, জাতীয় বেতন কমিশন চূড়ান্ত সুপারিশে কর্মচারীদের এই প্রস্তাবনাকে কতটা গুরুত্ব দেয়। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
কর্মচারীর প্রস্তাবনা অনুযায়ী ১৪ গ্রেডের সম্ভাব্য বেতন কাঠামো
(গ্রেড মার্জ ও সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩২,০০০ টাকা ধরে প্রস্তাবিত)
*দ্রষ্টব্য: কর্মচারীর প্রস্তাবে ১১ এবং ২০ গ্রেডকে আলাদা রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু গ্রেড সংখ্যা ১৪ তে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে এবং সর্বনিম্ন বেতন ৩২,০০০ টাকা (সম্ভাব্য) চাওয়া হয়েছে, সেহেতু যৌক্তিক কাঠামো তৈরির জন্য এবং বেতন অনুপাতের সামঞ্জস্য রাখতে ২০তম গ্রেডকে সর্বনিম্ন বেতন (২২,০০০) ধরে গ্রেড মার্জের মাধ্যমে ১৪টি গ্রেড তৈরি করা হয়েছে। কর্মচারীর প্রস্তাবিত ১১তম গ্রেডের (৩২,০০০ টাকা প্রারম্ভিক বেতন) কাছাকাছি বেতন কাঠামোতে রাখা হয়েছে।
কাঠামোর যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ:
১. গ্রেড মার্জ: * ১২, ১৩, ১৪ গ্রেড মার্জ: এই তিনটি গ্রেড মার্জ করে ‘নতুন গ্রেড-১২’ তৈরি করা হয়েছে, যা গ্রেড জটিলতা দূর করবে। * ১৫, ১৬ গ্রেড মার্জ: এই দুটি গ্রেড মার্জ করে ‘নতুন গ্রেড-১৩’ তৈরি করা হয়েছে। * ১৭, ১৮, ১৯, ২০ গ্রেড মার্জ: যেহেতু গ্রেড ১৭, ১৮, ১৯, ২০-এর মধ্যে বর্তমান বেতন স্কেলে বেতনের ব্যবধান খুব কম (২০০ থেকে ১০০০ টাকা), তাই এই ৪টি গ্রেডকে মার্জ করে সর্বনিম্ন ‘নতুন গ্রেড-১৪’ তৈরি করা হয়েছে।
২. সর্বনিম্ন বেতনের সমন্বয়: * কর্মচারীর দাবি অনুযায়ী ৩২,০০০ টাকা প্রারম্ভিক বেতনকে ‘নতুন গ্রেড-১১’-এর জন্য ধার্য করা হয়েছে। এটি বর্তমান গ্রেড-১১-এর (বর্তমান প্রারম্ভিক বেতন ১২,৫০০ টাকা) তুলনায় প্রায় বেশি। * তবে সর্বনিম্ন গ্রেড (নতুন গ্রেড-১৪) এ প্রারম্ভিক মূল বেতন ২২,০০০ টাকা রাখা হয়েছে, যা বর্তমান গ্রেড-২০ এর (৮,২৫০ টাকা) তুলনায় বেশি।
৩. বেতন অনুপাত (সর্বোচ্চ : সর্বনিম্ন): * এই প্রস্তাবিত কাঠামোতে সর্বোচ্চ গ্রেডের (গ্রেড ১) নির্ধারিত মূল বেতন টাকা এবং সর্বনিম্ন গ্রেডের (গ্রেড ১৪) প্রারম্ভিক মূল বেতন টাকা। * এতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত দাঁড়ায়: (প্রায়)। এটি বেতন বৈষম্য কমাতে একটি সুষম ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কাছাকাছি অনুপাত।

