সরকারি চাকুরীজীবীর বিধবা স্ত্রীর পেনশন: শতভাগ সমর্পনকারীদের একটি মানবিক আবেদন?
সরকারি চাকুরী থেকে অবসরপ্রাপ্তদের মৃত্যুর পর তাদের বিধবা স্ত্রীরা পেনশন সুবিধার ক্ষেত্রে প্রায়শই এক ধরনের বৈষম্যের শিকার হন। একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর জন্য পেনশন পুনস্থাপন না হওয়ায় অনেক বিধবা স্ত্রীকেই অত্যন্ত সীমিত আর্থিক সহায়তার উপর নির্ভর করতে হয়। এর ফলে তাদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।–সরকারি চাকুরীজীবীর বিধবা স্ত্রীর পেনশন
আমার/আপনার বাবা ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর আপনার মা শুধুমাত্র মাসিক ১,৫০০ টাকা পারিবারিক চিকিৎসা ভাতা বাবদ পেয়ে থাকেন, যা বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। এটি একটি বড় ধরনের বৈষম্য, যেখানে একই ধরনের পরিস্থিতিতে থাকা অন্য অনেক বিধবা স্ত্রীরা স্বামীর পেনশনের একটি অংশ পেয়ে থাকেন।
কেন এই বৈষম্য? সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী স্বামীর পারিবারিক পেনশন পাওয়ার অধিকারী। এই পেনশন সাধারণত স্বামীর পেনশনের অর্ধেক হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যদি স্বামীর মৃত্যুর আগে পেনশন পুনস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হয়, তাহলে বিধবা স্ত্রী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
আপনার বাবার ক্ষেত্রেও সম্ভবত এমনটিই ঘটেছে। অবসর গ্রহণের ১২ বছর পর তার মৃত্যু হয়েছে এবং এই সময়ের মধ্যে যদি পেনশন পুনস্থাপন সংক্রান্ত কোনো জটিলতা থেকে থাকে, তাহলে সেই প্রভাব আপনার মায়ের উপর পড়েছে। এর ফলে আপনার মা সরকারি বিধবা স্ত্রী হিসেবে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শতভাগ পেনশন সমর্পনকারীদের জন্য সুখবর আসছে / শুধু চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতায় জীবন চলে না
পেনশন সংক্রান্ত নতুন সুবিধা? হ্যাঁ। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের জন্য পেনশন পুনঃস্থাপনের অপেক্ষাকাল ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বছর করা হচ্ছে। এখনও এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।
Caption: New Pension Rules
পারিবারিক পেনশন পুন:স্থাপন ২০২৫ । খুব শীঘ্রই বঞ্চিত পরিবার পেনশন পুন:স্থাপিত হতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার।
- পেনশন পুনস্থাপন সহজীকরণ: যে সকল ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর কারণে পেনশন পুনস্থাপন হয়নি, সেই সকল ক্ষেত্রে বিধবা স্ত্রীর আবেদনের ভিত্তিতে দ্রুত পেনশন পুনস্থাপনের ব্যবস্থা করা হোক।
- এককালীন আর্থিক সহায়তা: পেনশন চালু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিধবা মায়েদের জন্য একটি বিশেষ এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
- নিয়ম সংশোধন: পেনশন সংক্রান্ত বিধিমালায় এমন কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিধবা স্ত্রী শুধুমাত্র প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে পেনশন থেকে বঞ্চিত না হন।
- আপনার এবং আপনার মায়ের মতো আরও অনেক পরিবারের এই সমস্যাটি সমাধান করা এখন সময়ের দাবি। এটি কেবল একটি আর্থিক সহায়তার বিষয় নয়, বরং একজন বিধবা মায়ের প্রতি সমাজের নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্বের বিষয়।
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান প্রয়োজন কি?
এমন অনেক বিধবা মা আছেন যারা আপনার মায়ের মতোই একই পরিস্থিতিতে আছেন। তারা তাদের স্বামীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিবাহ করেননি এবং একাকী জীবন যাপন করছেন। এই মায়েদের জন্য সামান্য আর্থিক সাহায্যও অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। মাসিক মাত্র ১,৫০০ টাকা দিয়ে ওষুধপত্র কেনা, চিকিৎসা খরচ চালানো এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা প্রায় অসম্ভব। এই বৈষম্য দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। যে সকল বিধবা মা তাদের স্বামীর মৃত্যুর পর পেনশন পুনস্থাপন না হওয়ার কারণে পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তাদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা হোক। এতে করে শত শত বিধবা মা আর্থিক দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবেন এবং সম্মানের সাথে জীবন যাপন করতে পারবেন।