ছুটি বিধিমালা ২০১৮ pdf । নৈমিত্তিক ছুটি একসাথে কতদিন নেওয়া যায়?
নৈমিত্তিক ছুটি (Casual Leave) হলো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের জন্য স্বল্পমেয়াদী ছুটি। যা সাধারণত ব্যক্তিগত বা আকস্মিক প্রয়োজনে নেওয়া হয়। এই ছুটি অন্যান্য ছুটির মতো অর্জিত বা জমা হয় না এবং এর কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে–ছুটি বিধিমালা ২০১৮ pdf
ছুটি বিধিমালা বলতে সাধারণত সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের ছুটির নিয়মকানুনকে বোঝায়। এই বিধিমালা কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের ছুটি, যেমন – অর্জিত ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি, ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ছুটি বিধিমালা ১৯৫৯ (The Prescribed Leave Rules, 1959) প্রযোজ্য। এই বিধিমালায় বিভিন্ন ধরনের ছুটির নিয়মাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
ছুটির মূল নিয়মগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
- অর্জিত ছুটি: একজন সরকারি কর্মচারী তার চাকরিকালের প্রতি ১১ দিনে ১ দিন অর্জিত ছুটি পেয়ে থাকেন। এই ছুটি জমা হতে পারে এবং একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত জমা রাখা যায়।
- নৈমিত্তিক ছুটি: প্রতি বছর একজন সরকারি কর্মচারী ২০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি পেয়ে থাকেন। এই ছুটি একসাথে ৩ দিনের বেশি নেওয়া যায় না।
- অসুস্থতাজনিত ছুটি: অসুস্থতাজনিত কারণে একজন সরকারি কর্মচারী ডাক্তারের সার্টিফিকেট জমা দিয়ে ছুটি নিতে পারেন। এই ছুটির পরিমাণ নির্দিষ্ট নয় এবং এটি অসুস্থতার ধরনের উপর নির্ভর করে।
- মাতৃত্বকালীন ছুটি: একজন মহিলা সরকারি কর্মচারী সন্তান প্রসবের পূর্বে ও পরে ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়ে থাকেন।
- অন্যান্য ছুটি: এছাড়াও, সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিশেষ ছুটি, যেমন – শিক্ষা ছুটি, তীর্থযাত্রা ছুটি, ইত্যাদি প্রযোজ্য।
নৈমিত্তিক ছুটির উভয় দিকে সরকারী ছুটি সংযুক্ত করা যাইবে না। এই ছুটি ভোগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে সদর দপ্তরে স্থান ত্যাগ করিতে পারিবেন না।
নৈমিত্তিক ছুটি একবারে কত দিন নেয়া যায়? আবেদনক্রমে একজন সরকারী কর্মচারী সর্বোচ্চ তিন দিনের জন্য নৈমিত্তিক ছুটি একবার এবং শুক্রবার অথবা অন্যান্য সরকারী ছুটি সংযুক্তে একাধিকবার প্রদান করা যাইতে পারে। যে ক্ষেত্রে শুক্রবার কিংবা সরকারী ছুটি নৈমিত্তিক ছুটি সঙ্গে যুক্ত করার অনুমতি না দেওয়া হয় সেই ক্ষেত্রে শুক্রবার অথবা সরকারী ছুটির দিনটি বা দিনগুলি নৈমিত্তিক ছুটি হিসাবে গণ্য হইবে। নৈমিত্তিক ছুটি নিয়া একজন সরকারী কর্মচারীকে তাহার কর্মস্থল হইতে এমন দূরত্বে যাইতে দেওয়া যাইবে না যেখান হইতে সদর দপ্তরে কাজে যোগদান আদেশ দেওয়ার পর কাজে যোগ দিতে ৪৮ ঘন্টার অধিক সময় লাগিবে।
Caption: ছুটি বিধিমালা পিডিএফ
সামান্য শারীরিক অসুস্থ্যতা বা কোন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে একটি পঞ্জিকা বর্ষে ২০ দিন যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কোন সরকারী কর্মচারী যে ছুটি ভোগ করেন তাহাই নৈমিত্তিক ছুটি। নৈমিত্তিক ছুটিকালীন সময় কর্তৃব্য কর্মেরত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই ছুটি ভোগকালে ছুটি মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করা যায় না। নৈমিত্তিক ছুটির নির্দেশাবলী নিম্নরূপ:
- (১) নৈমিত্তিক ছুটি চাকুরী বিধিমালা স্বীকৃত ছুটি নয় এবং নৈমিত্তিক ছুটি জনিত অনুপস্থিতিকে কাজে অনুপস্থিতি হিসাবে গণ্য করা হয় না। বাংলাদেশ চাকুরী বিধিমালার প্রথম খন্ডের ১৯৫ নম্বর বিধির টীকা-২-এ উল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষে এইরূপ ছুটি মঞ্জুর করা হয়। এই ধরনের ছুটিতে অনুপস্থিত কর্মকর্তার কর্মদায়িত্ব পালনের জন্য কোন বদলীর (Leave Substitute) ব্যবস্থা করা হইবে না। তাই নৈমিত্তিক ছুটি প্রদানকারী ও ছুটি ভোগকারী কর্মকর্তার অনুপস্থিতির কারণে যদি জনস্বার্থ ক্ষুন্ন হয় তাহা হইলে ছুটি প্রদানকারী ও ছুটি ভোগকারী কর্মকর্তা উভয়েই দায়ী থাকিবেন। দুই পাশে সরকারি বা সাপ্তাহিক ছুটি লাগিয়ে নৈমিত্তিক ছুটি নেয়া যাবে না।
- (২) পঞ্জিকাবর্ষে সকল সরকারী কর্মচারী বৎসরে সর্বমোট ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করিতে পারিবেন।
- (৩) কোন সরকারী কর্মচারীকে এক সংঙ্গে ১০ দিনের বেশি নৈমিত্তিক ছুটি প্রদান করা যাইবে না। তবে, অত্র বিভাগের ২৫-২-১৯৮২ইং তারিখের বিজ্ঞপ্তি নং ইডি (রেগ-৬)/ছুটি-১৩/৮০-১৪ মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় কর্মরত সকল সরকারী কর্মচারীকে এক বৎসরে মঞ্জুরযোগ্য ২০ দিনের মধ্যে ১৫ দিন নৈমিত্তিক ছুটি একই সঙ্গে ভোদ করিতে দেওয়া যাইতে পারে।
- (৪) কোন কর্মকর্তা আবেদন জানাইলে সর্বোচ্চ ৩ দিনের মধ্যে নৈমিত্তিক ছুটি একবার বা একাধিকবার রবিবার (বর্তমানে শুক্রবার) অথবা কোন সরকারী ছুটির পূর্বে অথবা পরে সংযুক্ত করার অনুমতি প্রদান করা যাইতে পারে। যে ক্ষেত্রে এই ধরনের আবেদন করা হইবে না বা অনুমতি দেওয়া হইবে না সেই সকল ক্ষেত্রে রবিবার বা সরকারি ছুটির দিনগুলি ও নৈমিত্তিক ছুটি হিসাবে গণ্য করা হইবে।
- (৫) নৈমিত্তিক ছুটির উভয় দিকে সরকারী ছুটি যুক্ত করা যাইবে না।
- (৬) কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে নৈমিত্তিক ছুটি ভোগকারী কোন ব্যক্তি সদর দপ্তর ত্যাগ করিতে পারিবে না।
- (৭) নৈমিত্তিক ছুটিতে থাকাকালীন কোন ব্যক্তিকে সদর দপ্তর হইতে এমণ দূরত্বে যাইতে অনুমতি দেওয়া যাইবে না, যেখান হইলে সদর দপ্তরে কাজে যোগদানের আদেশ পাওয়ার পর কাজে যোগদান করিতে ৪৮ ঘন্টার অধিক সময় লাগিতে পারে।
- (৮) নিয়মিত ছুটি মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ অথবা অধস্তন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ নৈমিত্তিক ছুটি এবং তৎসঙ্গে সদর দপ্তর ত্যাগের অনুমতি প্রদান করিতে পারিবেন। গুরুতর অসুস্থতা, বিশেষ করিয়া সংক্রামক ব্যাধির (যেমন গুটি বসন্ত) ক্ষেত্রে কাজে যোগদানের নির্দেশ প্রাপ্তি সঙ্গে সঙ্গেই কাজে যোগদান করা সম্ভব নয় বিধায় এই সকল ক্ষেত্রে নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করার প্রশ্ন উঠে না। তবে ব্যক্তিগত অসুবিধা, সামান্যতম অসুস্থতা (যেমন সাধারণ জ্বর) ইত্যাদি কারণে নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা যাইতে পারে।
- (৯) নৈমিত্তিক ছুটিতে থাকাকালীন কেহ বিদেশে গমন করিতে পারিবেন না।
- (১০) সরকারী কাজে অথবা প্রশিক্ষার্থে বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থানরত কর্মকর্তাদিগকে নৈমিত্তিক ছুটি প্রদান করতে সরকার নিরুৎসাহিত করেন। তবে কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্র বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে নৈমিত্তিক ছুটি প্রদান করা যাইবে।
- (১১) ৭ দিনের অতিরিক্ত নৈমিত্তিক ছুটি ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেট এর বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা হইয়াছে।
- (১২) হৃদরোগের মত বিশেষ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে ঘরে বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যাইতে পারে। কারণ ইহা অতীব গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত বিষয়। এই সব ক্ষেত্রে ঘরে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ডাক্তারী পরামর্শ ছুটির আগেই নিতে হইবে এবং উক্ত ডাক্তারী পরামর্শে রোগের বর্ণনা ও গুরুত্ব এবং বিশ্রামের মেয়াদ ও প্রয়োজনীয়তা সমন্ধে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকিতে হইবে।
- (১৩) এই ধরনের স্বাস্থ্যত কারণে ছুটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অর্জিত অথবা নৈমিত্তিক ছুটি হইতে কর্তন করা যাইবে।
সর্বোচ্চ কয় দিন ছুটি নেয়া যায়?
সরকারি কর্মচারীরা বছরে সর্বোচ্চ ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করতে পারেন। একজন সরকারি কর্মচারী একসাথে সর্বোচ্চ ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি নিতে পারেন। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই সীমা শিথিলযোগ্য। এই ছুটি সাধারণত ব্যক্তিগত বা আকস্মিক প্রয়োজনে নেওয়া হয়, যেমন সামান্য অসুস্থতা বা জরুরি পারিবারিক কাজ। এই ছুটি কোনোভাবেই কর্মীর অর্জিত ছুটির সাথে যুক্ত করা যায় না।
এই ছুটি নেওয়ার জন্য সাধারণত পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। এই ছুটি কর্মীর অধিকার নয়, এটা কর্তৃপক্ষের বিবেচনার উপর নির্ভর করে। এই ছুটি জমা হয় না, অর্থাৎ বছরের শেষে অব্যবহৃত ছুটি বাতিল হয়ে যায়। আপনি সরকারি ছুটি বিধিমালা ১৯৫৯ (The Prescribed Leave Rules, 1959) দেখতে পারেন।
https://bdservicerules.info/casual-leave-rules-bd-2/