বেতন কমিশনের অনলাইন জরিপ ২০২৫ । বৈষম্য কমাতে ‘১:৪’ অনুপাতের পক্ষে সরকারি কর্মচারীরা?
জাতীয় বেতন কমিশন-২০২৫ কর্তৃক পরিচালিত অনলাইন জরিপের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীরা বেতন গ্রেডের অনুপাত নিয়ে জোরালো মতামত দিচ্ছেন। জরিপের ১১ নম্বর প্রশ্নে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল বেতনের অনুপাত চাওয়া হয়েছে, যেখানে অপশন হিসেবে ‘১:৮’, ‘১:১০’, ‘১:১২’ এবং ‘অন্যান্য’ রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ মনে করছে, চরম বেতন বৈষম্য কমাতে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ‘অন্যান্য’ অপশনটি বেছে নিয়ে ১:৪ বা ১:৫ অনুপাতের পক্ষে ভোট দেওয়া জরুরি।
বৈষম্য বাড়ার শঙ্কা
অনুপাত বলতে বোঝানো হচ্ছে, সর্বনিম্ন গ্রেডের (২০তম) মূল বেতন যদি ১ টাকা হয়, তাহলে সর্বোচ্চ গ্রেডের (১ম) মূল বেতন হবে ৮, ১০ বা ১২ টাকা। বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত প্রায় ১:১০।
কর্মচারীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, যদি ১:৮ অনুপাত গ্রহণ করা হয় এবং ২০তম গ্রেডের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা ধরা হয়, তবে সর্বোচ্চ স্কেল হবে ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। এই বিশাল ব্যবধানকে তারা ‘চরম বৈষম্য’ হিসেবে দেখছেন। তাদের আশঙ্কা, এমন বড় অনুপাত কার্যকর হলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এটিকে পুঁজি করে দ্রব্যমূল্য আরও বাড়িয়ে দেবে, যা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলবে এবং বেতন বৈষম্য কমার বদলে বাড়বে।
কর্মচারীদের দাবি: ১:৪ বা ১:৫ অনুপাত
অন্যদিকে, যদি ১:৪ বা ১:৫ অনুপাত নির্ধারণ করা হয় এবং ২০তম গ্রেডের মূল বেতন ২৫ হাজার টাকা ধরা হয়, তবে সর্বোচ্চ স্কেল দাঁড়াবে ১ লক্ষ টাকা বা ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। কর্মচারীরা মনে করছেন, এই অনুপাতই বেতন গ্রেডের বৈষম্য কমাতে সবচেয়ে কার্যকর হবে এবং ন্যায়সঙ্গত একটি বেতন কাঠামো নিশ্চিত করবে।
‘অন্যান্য’ অপশনে জোর
এই পরিস্থিতিতে, সরকারি কর্মচারীরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে অনলাইন জরিপের ‘অন্যান্য’ অপশনটি বেছে নিয়ে ১:৪ বা ১:৫ অনুপাত পূরণের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য হলো—সকলের সম্মিলিত মতামতের মাধ্যমে বেতন কমিশনকে একটি বৈষম্যহীন পে স্কেল প্রণয়নে প্রভাবিত করা।
কর্মচারী নেতারা মনে করছেন, এই জরিপের ফলাফলই নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই নিজেদের দীর্ঘদিনের দাবি ‘কম বৈষম্যপূর্ণ অনুপাত’ (১:৪ বা ১:৫) বাস্তবায়নে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে সম্মিলিত প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা।
বেতন বৈষম্য বহাল রাখার ‘বিদেশি যুক্তি’তে ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মচারীরা । ১:১০ অনুপাত বজায় রাখার সিদ্ধান্তে হতাশা, কর্মচারীদের দাবি ১:৪ বা ১:৫
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল বেতনের অনুপাত ১:১০ বজায় রাখার যে প্রবণতা জাতীয় বেতন কমিশন দেখাচ্ছে, তা নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে যে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশেও এই ধরনের অনুপাত (৮:১ থেকে ১০:১) প্রচলিত রয়েছে, তাই গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে আনলেও এই অনুপাত বহাল রাখা হবে। সরকারের এই ‘পার্শ্ববর্তী দেশের দোহাই’ দেওয়ার প্রবণতাকে কর্মচারীরা বৈষম্য জিইয়ে রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন।
অনুপাত কেন ক্ষোভের কারণ?
বর্তমানে সরকারি বেতনের সর্বোচ্চ (গ্রেড-১) ও সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) পদের বেতনের অনুপাত প্রায় ১:১০ (দশ গুন)। কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন যে, এই বিশাল পার্থক্য সমাজে বৈষম্য তৈরি করে এবং নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জীবনধারণ কঠিন করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ২০তম গ্রেডের মূল বেতন হয় ১৬ হাজার টাকা, তবে ১:১০ অনুপাত ধরলে প্রথম গ্রেডের মূল বেতন দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।
কর্মচারীদের দাবি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই অনুপাত কমিয়ে ১:৪ বা ১:৫ করা উচিত। তারা বলছেন, বর্তমান উচ্চ অনুপাত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে নিম্ন-মধ্যবিত্ত কর্মচারীদের জন্য একটি চরম বৈষম্যমূলক অবস্থা তৈরি করছে।
কমিশনের অবস্থান ও কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া
জাতীয় বেতন কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমানোর চিন্তা থাকলেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১ এর মধ্যেই রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে প্রতিবেশী দেশগুলোর বেতন কাঠামোকে একটি যুক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
তবে কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন সংগঠন এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয়। তাদের মতে, দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, কেবল পার্শ্ববর্তী দেশের অনুকরণ করা ঠিক নয়। কর্মচারীরা মনে করছেন, ১:১০ অনুপাত বহাল থাকলে আর্থিক সংকট কমবে না বরং বাড়বে, কারণ মুষ্টিমেয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বেতন ব্যাপক হারে বাড়লে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অনলাইন জরিপে কর্মচারীদের পাল্টা পদক্ষেপ
এই ক্ষোভের ফলস্বরূপ, জাতীয় বেতন কমিশনের অনলাইন জরিপের ১১ নম্বর প্রশ্নে (যেখানে অনুপাত চাওয়া হয়েছে) কর্মচারীরা এখন ‘অন্যান্য’ অপশনটি বেছে নিয়ে ১:৪ বা ১:৫ অনুপাত পূরণের জন্য নিজেদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। তারা বিশ্বাস করে, সম্মিলিতভাবে এই মতামত দিলে কমিশন বৈষম্য কমাতে বাধ্য হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের শুরুতেই নতুন পে স্কেল কার্যকর করার যে অঙ্গীকার করেছে, সেই প্রেক্ষাপটে কর্মচারীদের এই সম্মিলিত প্রতিবাদ নতুন কাঠামোতে কেমন পরিবর্তন আনে, সেদিকেই সবার নজর থাকবে।