১:৪ অনুপাতের দাবিকে সমর্থন ২০২৫ । সরকারি কর্মচারীদের বৈষম্য নিরসনে আশার আলো কি দেখা যাচ্ছে?
সরকারি কর্মচারীদের বেতন গ্রেডের বৈষম্য নিরসনে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠনের ১:৪ বা ১:৫ অনুপাতের নতুন বেতন স্কেল এবং ২০টি গ্রেড ভেঙে ১২টি গ্রেড করার দাবিটিকে জোরালো সমর্থন জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা-১:৪ অনুপাতের দাবিকে সমর্থন ২০২৫
অনেক বিশেষজ্ঞ এবং কর্মচারী নেতারা মনে করেন, বিদ্যমান পে স্কেলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতনের মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে, তা কমিয়ে ১:৪ বা ১:৫ অনুপাত নির্ধারণ করা হলে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের আর্থিক দুর্দশা অনেকাংশে লাঘব হবে। একই সাথে, গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ১২টিতে নিয়ে আসা হলে গ্রেডগুলোর মধ্যেকার স্বল্প ব্যবধানজনিত জটিলতা ও পদোন্নতি নিয়ে সৃষ্ট দীর্ঘদিনের অসন্তোষ দূর হবে এবং একটি যৌক্তিক ও টেকসই বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এই দাবিটি অত্যন্ত স্পষ্ট এবং এর মাধ্যমে বৈষম্য কমানোর একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যাচ্ছে, তাই সরকারের উচিত হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে এই দাবিকে কার্যকর করে কর্মীদের মধ্যে আস্থা ও কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনা।
দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধান যুক্তি: অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মচারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এই প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি হওয়া উচিত:
১. অসহনীয় মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়: বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা তাদের বর্তমান বেতন দিয়ে কোনোভাবেই জীবনযাত্রার নূন্যতম মান ধরে রাখতে পারছেন না। মাস শেষ হওয়ার আগেই তাঁদের ধার-দেনায় জর্জরিত হতে হচ্ছে। ২. সম্মানজনক জীবনধারণের নিশ্চয়তা: ১:৪ অনুপাত এবং ১২টি গ্রেডে সর্বনিম্ন মূল বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হলে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা একটি সম্মানজনক জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা পাবে। এই বেতন শুধু তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণ নয়, বরং মানসিক চাপ কমিয়ে কাজে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। ৩. কর্মদক্ষতা ও সেবার মান: অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেলে কর্মচারীদের কাজের প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ বাড়বে, যা সামগ্রিকভাবে সরকারি সেবার মান বৃদ্ধি করবে। বৈষম্য দূর হলে প্রতিষ্ঠানে সুস্থ কাজের পরিবেশ তৈরি হবে। ৪. ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট: যেহেতু নতুন পে কমিশন গঠনের আলোচনা চলছে, তাই ডিসেম্বরের মধ্যে এই যৌক্তিক দাবিকে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা সরকারের মানবিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে, যা লাখ লাখ কর্মচারীর কাছে একটি আশার বার্তা দেবে।
সংক্ষেপে, এই দাবি শুধু বেতন বৃদ্ধির নয়, বরং কর্মচারীদের বাঁচিয়ে রাখার একটি দাবি। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে, দ্রুত এই বৈষম্য নিরসন করা সরকারের নৈতিক এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব।
১. আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ (১:৪ অনুপাত): আন্তর্জাতিকভাবে একটি আদর্শ ও বৈষম্যহীন বেতন কাঠামোর জন্য ১:৪ অনুপাত একটি স্বীকৃত মানদণ্ড। এই মান অনুসরণ করা হলে বেতন স্কেলের ভিত্তি মজবুত হবে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি যৌক্তিক হিসেবে বিবেচিত হবে। ২. দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা: আপনি ঠিকই বলেছেন, এমন বেতন কাঠামো হওয়া উচিত যাতে অল্প সময়ের মধ্যেই আবার নতুন করে বৈষম্য তৈরি না হয় এবং কর্মচারীদের বারবার আন্দোলন করতে না হয়। ন্যূনতম ৩৫,০০০ টাকা দিয়ে শুরু করলে তা মূল্যস্ফীতির চাপ সামলে একটি সম্মানজনক জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করতে পারবে এবং কাঠামোটিকে আগামী কয়েক বছরের জন্য স্থিতিশীলতা দেবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ৩৫,০০০ টাকা সর্বনিম্ন বেতন
প্রস্তাবিত ৩৫,০০০ টাকা সর্বনিম্ন বেতন স্কেলটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মধ্যম আয়ের দেশের উপযোগী এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সংক্ষেপে, ১:৪ অনুপাত, ১২টি গ্রেড ও সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা—এই তিনটি উপাদান নিশ্চিত করতে পারলে তা কেবল বৈষম্যই দূর করবে না, বরং জাতীয় অর্থনীতি, কর্মচারীর মনোবল ও সরকারি সেবার মান—সব ক্ষেত্রেই একটি ইতিবাচক ও টেকসই প্রভাব ফেলবে।
সরকারি কর্মচারীদের দাবি পূরণে বিলম্ব হলে সেই দাবি আদায়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে যে ধরনের সুনির্দিষ্ট ও ধাপে ধাপে চাপ সৃষ্টির কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে, তা নিম্নরূপ:
দাবি আদায়ে সম্ভাব্য কর্মসূচি ও কৌশল
যদি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন বেতন স্কেলের (১:৪ অনুপাত, ১২ গ্রেড ও সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা) গেজেট কার্যকর না হয়, তবে কর্মচারী সংগঠনগুলো নিম্নলিখিত ধাপে ধাপে কর্মসূচি নিতে পারে:
কৌশলগত দিক
কর্মসূচি ফলপ্রসূ করার জন্য কর্মচারীদের উচিত হবে:
- ঐক্য বজায় রাখা: সকল গ্রেড ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের মধ্যে শতভাগ ঐক্য ও সমন্বয় নিশ্চিত করা।
- গণমাধ্যম সম্পৃক্ততা: মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের দুর্দশার মানবিক দিকটি তুলে ধরে গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীর সহানুভূতি অর্জন করা।
- আলোচনার পথ খোলা রাখা: কঠোর কর্মসূচির মধ্যেও সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রেখে দাবি আদায়ে নমনীয় ও অনড় থাকার ভারসাম্য বজায় রাখা।
আপনার প্রস্তাবিত এই কর্মসূচিগুলো স্পষ্টতই বুঝিয়ে দেয় যে কর্মচারীরা তাদের দাবি পূরণের জন্য শান্তিপূর্ণ কিন্তু দৃঢ় অবস্থানে আছেন।