সর্বশেষ প্রকাশিত

📰 পে-স্কেল এখন ‘এক দফা’ দাবি: উত্তপ্ত সরকারি কর্মচারী অঙ্গন

সারা বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের একমাত্র ও সর্বজনীন দাবি এখন নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন। মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো কার্যকর করার এই দাবিতে কর্মচারী সংগঠনগুলো একযোগে আন্দোলন জোরদার করেছে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমানে তাদের আর অন্য কোনো দাবি নেই—তাদের মূল ফোকাস এখন নবম পে-স্কেল বা বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন।

🔔 পে-স্কেল: কেন এটিই এখন প্রধান দাবি?

সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের সমাবেশে প্রদত্ত বক্তব্য এবং কর্মসূচির বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পে-স্কেলকে কেন একমাত্র দাবিতে পরিণত করা হয়েছে:

  • দীর্ঘসূত্রিতা: ২০১৫ সালের পর সরকারি কর্মচারীদের বেতন আর বৃদ্ধি হয়নি। অথচ প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বৃদ্ধির কথা ছিল।

  • বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি: গত এক দশকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বেতন কাঠামোতে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।

  • আর্থিক চাপ ও হতাশা: বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামোর কারণে অনেক সরকারি কর্মচারী, বিশেষ করে নিম্ন গ্রেডভুক্তরা (যেমন ১২ গ্রেডভুক্ত) আর্থিক চাপ এবং হতাশায় ভুগছেন। তারা ১২ গ্রেডের সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা করার দাবি তুলেছেন।

  • অন্যান্য সুবিধা: পে-স্কেলের পাশাপাশি কর্মচারীরা টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল, শতভাগ পেনশন, ন্যায্যমূল্যে রেশন, আউটসোর্সিং বাতিল এবং নিয়োগবিধিতে সমতাসহ বিভিন্ন দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু পে-স্কেল বাস্তবায়ন না হওয়ায় আপাতত সব দাবিকে এটির মধ্যে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।

🗓️ আল্টিমেটাম ও হুঁশিয়ারি

কর্মচারী সংগঠনগুলো আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন পে-স্কেলের গেজেট জারির জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। তারা জানুয়ারি ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নবম পে-স্কেল কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।

অন্যথায়, তারা কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যার মধ্যে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ এবং স্থায়ী কর্মবিরতির মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সাম্প্রতিককালে, বেতন বৈষম্য ও অন্যান্য দাবিতে আন্দোলনকারী কর্মচারীরা অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন, যা এই আন্দোলনের তীব্রতা প্রমাণ করে।

🗣️ সরকারের অবস্থান

পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশের দাবি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “পে স্কেল ঘোষণা করা সহজ কাজ নয়, অনেকগুলো বিষয় জড়িত। কর্মচারীদের আল্টিমেটামের মধ্যে এতো কম সময়ে ঘোষণা করা সম্ভব হবে না। আমরা কাজ করছি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন পরবর্তী নির্বাচিত সরকার নিতে পারে।

সরকারি কর্মচারীদের দাবি এবং সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত গেজেট প্রকাশ না হওয়ার ইঙ্গিতের ফলে কর্মচারী অঙ্গনে ক্ষোভ আরও বাড়ছে। কর্মচারীরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই দ্রুত বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য চাপ দিচ্ছেন।

পে স্কেল কি দিবে?

সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল বা নবম জাতীয় বেতন স্কেল এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা এখনও আসেনি।

সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানা যায়:

✅ আশার দিক: কমিশন ও আল্টিমেটাম

  • পে-কমিশন গঠন: সরকার সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা পর্যালোচনা করে নতুন বেতন কাঠামো তৈরির জন্য জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ গঠন করেছে। এই কমিশন বর্তমানে সুপারিশ প্রণয়নের কাজ করছে।

  • কর্মচারীদের দাবি ও আল্টিমেটাম: সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নবম পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ করার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছে। তারা ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নতুন পে-স্কেল কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে।

  • কার্যকরের ইঙ্গিত: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন যে নতুন বেতন কাঠামো অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এর জন্য পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করা হবে না। ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকে এটি কার্যকর হতে পারে।

  • সুপারিশের খসড়া: কমিশনের পক্ষ থেকে খসড়া প্রস্তাবে বর্তমান বেতনের তুলনায় ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর সুপারিশের কথা জানা গেছে। সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ৩৫ হাজার টাকা করার দাবি রয়েছে।

⚠️ অনিশ্চয়তার দিক: বিলম্বের কারণ

  • অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, পে-স্কেল ঘোষণা করা সহজ কাজ নয় এবং কর্মচারীদের দেওয়া আল্টিমেটামের মধ্যে, অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এটি সম্ভব হবে না।

  • প্রশাসনিক জটিলতা: কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত হওয়ার পরও তা যাচাই-বাছাই, প্রশাসনিক সমন্বয়, এবং গেজেট প্রকাশের জন্য অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের মধ্যে আরও অনেক বৈঠকের প্রয়োজন।

  • নির্বাচনী প্রস্তুতি: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো ব্যস্ত থাকায় পে-স্কেল সংক্রান্ত কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। কিছু সূত্র বলছে, গেজেট প্রকাশ কার্যত অনিশ্চিত হতে পারে।

সারসংক্ষেপ:

পে-স্কেল দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান এবং সরকার তা বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে কবে নাগাদ গেজেট প্রকাশিত হবে এবং কবে থেকে কার্যকর হবে, সেই তারিখটি এখনও অনিশ্চিত। ১৫ ডিসেম্বরের আল্টিমেটাম মিস হলে ১৭ ডিসেম্বর থেকে কর্মচারী সংগঠনগুলো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *