সর্বশেষ প্রকাশিত

📢 সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ: ‘৯ম পে স্কেল’ বাদ দিয়ে ‘সচিবালয় ভাতা’র আন্দোলন কেন?

ঢাকা: বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী মহলে এখন তীব্র আলোচনা ও বিতর্ক। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘নবম পে স্কেল’ (৯ম পে স্কেল) বনাম ‘সচিবালয় ভাতা’ ও গ্রেড পরিবর্তনের আন্দোলন। বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের মধ্যে দেখা দিয়েছে স্পষ্ট বিভাজন। বৃহত্তর অংশের দাবি, যখন সকল কর্মচারীর জীবনধারণের জন্য নবম পে স্কেল অত্যাবশ্যক, তখন কিছু গোষ্ঠীর ‘সুবিধাবাদী’ আন্দোলন মূল দাবিকে দুর্বল করছে।

পে স্কেলের গুরুত্ব: জীবনযাত্রার ব্যয়ের চাপ

২০১৫ সালে সর্বশেষ অষ্টম পে স্কেল কার্যকর হয়েছিল। তারপর কেটে গেছে প্রায় ৯ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে আকাশচুম্বী। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে পরিবহন ভাড়া, বাড়ি ভাড়া—সবই সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের একটি বিশাল অংশ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের কর্মচারীরা, হিমশিম খাচ্ছেন পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচতে।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের মতো সংগঠনগুলো বারবার জোর দিয়ে বলছে, এই মুহূর্তে নবম পে স্কেল বাস্তবায়নই একমাত্র পথ, যা কর্মচারীদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। তাদের মতে, এটি কেবল বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং ‘খেয়ে-পরে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার’ নিশ্চিত করার প্রশ্ন।

বিতর্কিত ‘সচিবালয় ভাতা’ ও গ্রেড পরিবর্তনের দাবি

যখন ৯ম পে স্কেল নিয়ে জোরালো আন্দোলন চলছে, ঠিক তখনই কিছু কর্মচারী সংগঠন ২০% সচিবালয় ভাতা এবং ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের মতো সুনির্দিষ্ট দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনই এখন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

অভিযোগ: ঐক্য পরিষদ এবং সাধারণ কর্মচারীদের একটি বড় অংশ অভিযোগ করছে যে, এই দাবিগুলো ‘ধান্দাবাজ’ এবং ‘সুবিধাবাদী’। তাদের মতে, সচিবালয় ভাতা বা নির্দিষ্ট গ্রেডের পরিবর্তন কেবল কিছু নির্দিষ্ট কর্মচারীর জন্য সুবিধা আনবে, যা বৃহত্তর কর্মচারী সমাজের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়াবে। এটি পুরো কর্মচারী সমাজকে বিভক্ত করে দিচ্ছে এবং ৯ম পে স্কেলের মতো মৌলিক দাবি থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিচ্ছে।

‘দালালদের’ বয়কট করার আহ্বান

বিভেদের এই পরিস্থিতিতে কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ প্রকাশ্যে ‘দালাল’ ও ‘মীরজাফর’ আখ্যা দিয়ে এই ধরনের আন্দোলনকারীদের বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মূল বক্তব্য পরিষ্কার— “১৮ লক্ষ কর্মচারীদের সাথে যারা প্রতারণা করবে তাদেরকে বয়কট করতে হবে। ১৮ লক্ষ কর্মচারীর প্রাণের দাবী খেয়ে পড়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার দাবী ৯ম পে স্কেলকে পাশ কাটিয়ে যারা এই সময়ে ২০% সচিবালয় ভাতা এবং ১৩ তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেড পাওয়ার অযৌক্তিক আন্দোলন করছে এই সব মীরজাফর ধান্দাবাজদের ১৮ লক্ষ কর্মচারীর ঘৃণাভরে বয়কট করা উচিত। এরা ধান্দাবাজ সুযোগ বুঝে নিজেদের সুবিধা নেওয়ার লোভ পেয়ে বসে।”

সামনের পথ: ঐক্য নাকি বিভাজন?

সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এই স্পষ্ট বিভাজন নিঃসন্দেহে চলমান আন্দোলনকে দুর্বল করছে। একদিকে, সরকারের ওপর ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়নের চাপ সৃষ্টির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জরুরি, অন্যদিকে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন দাবি সেই ঐক্যকে বাধাগ্রস্ত করছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সরকারের উচিত সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে একটি সমন্বিত ও ন্যায্য সমাধান খুঁজে বের করা। অন্যথায়, এই বিভাজন কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়াতে পারে এবং বৃহত্তর আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *